বাংলা হান্ট ডেস্ক: তিনি শিক্ষক। পাশাপাশি, শিক্ষকতা তাঁর নেশাও বটে। যে কারণে এই মহান কাজকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। যদিও, আট বছর আগে খাতায়-কলমে অবসর নিলেও শিক্ষকতা ছাড়েননি তিনি। বরং, শেখানোর উৎসাহে এবং কচিকাঁচাদের প্রতি অনাবিল স্নেহে তিনি এখনও কাটিয়ে চলেছেন ছুটিহীন জীবন। শুধু তাই নয়, রোজই নদী পেরিয়ে স্কুলে এসে পড়ানোর গুরুদায়িত্ব এখনও নিয়েছেন নিজের কাঁধেই!
ছাত্রছাত্রী থেকে গ্রামের মানুষ, সকলের কাছেই তিনি একডাকে “বড় স্যার” নামে খ্যাত। যদিও, মহান এই শিক্ষকের আসল নাম হল শীলভদ্র কর। তিনি নবদ্বীপের ইদ্রাকপুর জুনিয়র হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক। অবসর গ্রহণের পরও তিনি পূর্ব বর্ধমান জেলার উত্তর শ্রীরামপুর থেকে নদী পেরিয়ে দীর্ঘ আট কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে স্কুলে আসেন রোজ।
বিনা পারিশ্রমিকেই ভালোবেসে এবং আন্তরিকতায় এখনও ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন তিনি। আর এভাবেই তিনি মানুষ গড়ার কাজে রয়েছেন ব্রতী। পাশাপাশি, শীলভদ্র বাবু তাঁর দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে পড়িয়েছেন হাজার হাজার পড়ুয়াকে। তাঁকে দেখলেই তারা আজও নতমস্তকে আশীর্বাদ নেন তাঁর কাছ থেকে। বড় স্যারের প্রতি তাদের অগাধ সম্মান এবং ভালবাসা প্রস্ফুটিত হয় শ্রদ্ধার মাধ্যমে।
জানা গিয়েছে যে, ২০১১ সালে কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে শুরু হয়েছিল এই স্কুল। তখনই এখানে যোগদান করেছিলেন শীলভদ্র বাবু। যদিও, এর আগে তিনি ছিলেন শ্রীরামপুর ইউনাইটেড হাইস্কুলে। সেখানে দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান শিক্ষক জানিয়েছেন, এই স্কুলের সঙ্গে তাঁর অনেক আবেগ এবং স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। একতলা স্কুলকে দোতলা হতে দেখার পাশাপাশি স্কুলের বহু আসবাবপত্র তৈরি করে দিয়েছেন তিনি।
মূলত, ছাত্র-ছাত্রীদেরই অত্যন্ত ভালোবাসেন এই শিক্ষক। তবে, “বড় স্যার” এবার চান এই স্কুলে নবম ও দশম শ্রেণি শুরু হোক। এদিকে, স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রিমন চন্দ্র জানিয়েছেন, বিগত সাত-আট বছরে অনেক কিছুই বদলালেও বদলাননি শুধু শীলভদ্র বাবু। ওনাকে গ্রামের মানুষ অত্যন্ত ভরসা করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইদ্রাকপুর জুনিয়র হাইস্কুলটি বেশ প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত। এমনকি, গ্রামটির চারদিক নদী দিয়ে পরিবেষ্টিত। অধিকাংশ গ্রামবাসীই সেখানে চাষাবাদ এবং মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেকেই আবার গ্রামের ইটভাটায়ও কাজ করেন। মূলত তাঁদের সন্তানরাই এই স্কুলে পড়াশোনা করে।
এমতাবস্থায়, নতুন স্কুলে পড়াতে এসে শীলভদ্র বাবু রীতিমত গ্রামের বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ছেলে মেয়েদের স্কুলে আনার চেষ্টা করতে থাকেন। যদিও, বছর দু’য়েক যেতে না যেতেই তাঁর অবসরের সময় হয়ে যায়। এমতাবস্থায়, হাল ছাড়েননি তিনি। বরং অবসর গ্রহণের পরেও শিক্ষকতার কাজ পুরো দমে করে চলেছেন সবার প্রিয় “বড় স্যার”।