বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করছেন ভারতীয় ভারোত্তোলকরা। এখনো অবধি যে ৯ টি পদক এসেছে, তার বেশিরভাগই এসেছে ভারোত্তোলন থেকে। কাল জুডো থেকেও দুটি পদক জুটেছে ভারতের। তবে ষষ্ঠ যে পদকটি ভারত পেয়েছিল তা বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে কিছুটা বিশেষ। ২০২২ কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম কোন পদক পেলেন একজন বাঙালি ক্রীড়াবিদ। আর রৌপ্য বা ব্রোঞ্জ নয়, একেবারে স্বর্ণপদকই এনে দিয়েছেন বাংলার অচিন্ত্য শিউলি।
মীরাবাঈ চানুর মত অচিন্ত্যও রেকর্ড গড়ে সোনা এনে দেন ভারতকে। ভারতীয় সময় রবিবার গভীর রাতেও ক্রীড়াঅনুরাগীরা তার পারফরম্যান্সের দিকে চোখ রেখেছিল। প্রথমেই স্ন্যাচে তিনি ১৪৩ কেজি ওজন তোলেন যা ৭৩কেজি বিভাগে কমনওয়েলথ রেকর্ড। এরপর ক্লিন এন্ড জার্কে তিনি তুলেছেন ১৭০ কেজি। দুটি মিলিয়ে তিনি মোট ৩১৩ কেজি ওজন তুলেছেন। এটিও একটি কমনওয়েলথ রেকর্ড।
অচিন্ত্যর দুরন্ত পারফরম্যান্সের জন্য তাকে সেলাম জানিয়েছেন ভারতের তথা বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার সচিন টেন্ডুলকার। সচিন মনে করেন নিজে অচিন্ত্য সাফল্য তরুণ ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। দর্জি হিসেবে এক সময়ে কাজ করা অচিন্ত্য আর্মিতে চাকরি পেয়েও তা ছেড়েছিলেন নিজের অনুশীলনের সময়ের অভাবের কারণে। তাকে কুর্নিশ জানিয়ে সচিন লিখেছেন, “হাওড়া থেকে দর্জি হিসেবে যাত্রা শুরু করে শেষ পর্যন্ত বার্মিংহ্যামে ভারতের তেরঙ্গা পতাকা সবচেয়ে উঁচুতে ওঠানো। অচিন্ত্য, আপনার গল্প সত্যিই সুন্দর এবং খুব অনুপ্রেরণামূলক। সোনা জয়ের জন্য অভিনন্দন এবং ভারতীয় আর্মিকেও এই প্রতিভাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।”
From starting as a tailor in Howrah to support your family, to making the tricolour 🇮🇳 fly high at Birmingham.
Such a wonderful journey & an inspirational story, Achinta!
Congratulations on the 🥇 & kudos to the Indian Army for supporting sporting talent.#CommonwealthGames2022 pic.twitter.com/sLfJZCZ7H4
— Sachin Tendulkar (@sachin_rt) August 1, 2022
অচিন্ত্যর জন্ম হাওড়ার দেওলপুরে। ছোটবেলাটা তার খুব একটা সুখের ছিল না। তার বাবা ছিলেন একজন রিকশাচালক। মাঝেমধ্যে শ্রমিকের কাজ করেও পয়সা রোজগার করতেন। ১২ বছর বয়সে ভারোত্তোলনের সঙ্গে পরিচয় হয় অচিন্ত্যর। তার আগে মাত্র ছোটবেলাতেই নিজের বাবাকে হারিয়েছিলেন। এরপর পরিবার চালাতে নিজের মা ও ভাইয়ের সাথে দর্জির কাজ করতে শুরু করেন অচিন্ত্য। তবে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যেও অচিন্ত্য নিজের অনুশীলন বন্ধ করতে চাননি। পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি তিনি সমানভাবে অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন। এরপরে নিজের চেষ্টায় আর্মিতে যোগদান অচিন্ত্য। কিন্তু অনুশীলনের সময় কমে যাওয়ায় সেই কাজ ছেড়ে দিতে দুবার ভাবেননি তিনি। সেই সময় তার পরিবারের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে উঠেছিল। তখন তাদের পাশে দাঁড়ান অচিন্ত্যর প্রশিক্ষক অস্তম দাস। অচিন্ত্য এরপর কিছুটা স্বস্তি পেয়ে নিজের কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যান। অল্পের জন্য ২০২০ অলিম্পিকে তিনি যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু এরপর ২০২১ জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো যেতেন আর এবার মাত্র ২০ বছর বয়সে কমনওয়েলথ গেমস ২০২২-এ ভারতের হয়ে তৃতীয় স্বর্ণপদক জিতেছেন তিনি।