Santipur: দুয়ারে পৌঁছয়নি সরকার! খুদকুঁড়ো খেয়েই দিন গুজরান করছে শান্তিপুরের প্রাক্তন অধ্যাপকের পরিবার

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভাগ্যের কঠিন পরিহাসের কাছে হার মেনে যায় সবকিছুই। পাশাপাশি, দারিদ্রের ভ্রুকুটি যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটাই যেন ফের একবার স্পষ্ট হয়ে গেল আমাদের রাজ্যে। বাবা অধ্যাপক থাকলেও বর্তমানে তাঁর সন্তানেরা চরম অভাবের সম্মুখীন হয়ে কোনোমতে টিকে রয়েছেন। এমনকি, জীবনযুদ্ধের হাল ছেড়ে দিয়ে দুই ভাই এক বোন মিলে বিষ খেয়ে করতে গিয়েছিলেন আত্মহত্যাও। কিন্তু, কোনোমতে বেঁচে যান তাঁরা। এমতাবস্থায়, নুন দিয়ে খুদকুঁড়ো খেয়েই দিন গুজরান হচ্ছে তাঁদের।

আর এমনই মর্মস্পর্শী ছবি দেখা গেল শান্তিপুর শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ডাবরে পাড়ার মুখোপাধ্যায় পরিবারে। যেখানে তীব্র অনটনের সাথে প্রতি মুহূর্তে চলছে লড়াই। জানা গিয়েছে, অধ্যাপক পরমানন্দ মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। এমতাবস্থায়, তাঁর সন্তানদের মধ্যে দুই মেয়ের মৃত্যু হলেও বর্তমানে রয়েছেন দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। পরমানন্দের মেয়ে নমিতার বর্তমান বয়স হল ৭২। তাঁর এক ভাই দেবাশিস বিজ্ঞানে স্নাতক। তাঁর বয়স হল ৭০। অপরদিকে, ছোট ভাই বিশ্বজিতের বয়সও পেরিয়ে গিয়েছে ৬৫-র গন্ডী। বিশ্বজিৎ বাণিজ্যে স্নাতক। এমতাবস্থায়, তাঁরা প্রত্যেকেই যথেষ্ট উচ্চশিক্ষিত হলেও পাননি কোনো চাকরি।

এদিকে, বাবা অধ্যাপক থাকলেও বিভিন্ন আইনি জটিলতার জন্য মেলেনি কোনো পেনশনও। শান্তিপুর পুরসভা থেকে শুরু করে রানাঘাট মহকুমাশাসকের অফিস, এমনকি বিকাশ ভবন পর্যন্ত বারংবার ঘুরেও মেলেনি পরমানন্দ বাবুর প্রাপ্য পেনশন। এমতাবস্থায়, দেবাশিস এক চিকিৎসকের কাছে সামান্য বেতনে “কেমিস্ট”-এর কাজকে বেছে নিয়েছিলেন। আর সেই উপার্জনেই কোনোমতে চলত সংসার।

কিন্তু, বর্তমানে বয়সের আধিক্য বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই কাজ তিনি আর করতে পারেন না। অপরদিকে, নমিতা দেবী ও তাঁর বার্ধক্য ভাতার দু’হাজার টাকা দিয়ে সংসার চালাতে কার্যত হিমশিম খেতে হয়। আর তাই, পেটের জ্বালা মেটাতে একবেলা খুদের চাল গুঁড়ো করে তা ফুটিয়ে ঘন ফ্যানের সাথে নুন দিয়ে খেয়েই চলছে দিন গুজরানের পালা।

এদিকে, বর্তমানে সরকার সাধারণ মানুষের সুযোগ-সুবিধার জন্য “দুয়ার” পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও এখনও “বঞ্চিত”-ই রয়েছে এই পরিবার। এমনকি, করোনার ভ্যাকসিনও তাঁরা পাননি। যদিও, স্থানীয় কাউন্সিলর দীপঙ্কর সাহা জানিয়েছেন যে, তাঁদের মধ্যে দু’জনের বার্ধক্য ভাতা করে দেওয়া হয়েছে। অন্য আরেকজনের ভাতাও শুরু করা হবে। পাশাপাশি, বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী, ওই পরিবারের প্রতি সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

shantipur teacher

এমতাবস্থায়, তাঁদের প্রতিবেশী প্রতাপচন্দ্র প্রামাণিক সাধ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মুখোপাধ্যায় পরিবারের উদ্দেশ্যে। এই প্রসঙ্গে প্রতিবেশী মিতা প্রামাণিক জানিয়েছেন “এক সময়ের সম্ভ্রান্ত এবং শিক্ষিত পরিবারের এই দুর্দশা দেখে সত্যিই খুব খারাপ লাগে। তাই, নিজেদের সামান্য রোজগার থেকে আমরা তাঁদের কিছুটা সাহায্য করার চেষ্টা করি।’’

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর