বাংলাহান্ট ডেস্ক : আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এলো বাংলা তথা ভারতের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুরের নাম। একটি প্রোডাকশন হাউসের শুটিংকে কেন্দ্র করে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই শাসিত ছাত্র সংসদ আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন বা আফসুর সাধারণ সম্পাদক শুভায়ন আচার্যের উপস্থিতিতেই হোস্টেলে শুটিংয়ের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও পড়ুয়া বা কর্তৃপক্ষের কাউকেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি বলে জানা গিয়েছে। ফলে, ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র সংসদ ফেসটু সহ আর্টস বিরোধী ছাত্র সংগঠনের বহু ছাত্রছাত্রী শুভায়ন আচার্যের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদগার করার পাশাপাশি তার পদত্যাগের ও দাবি জানিয়েছে। শুধু তাই নয় ফেসটুর চেয়ারপার্সন অরিত্র মজুমদারও মুখ খুলেছেন শুভায়নবাবুর বিরুদ্ধে।
জানা গিয়েছে, আফসুর তরফে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই হোস্টেল ক্যান্টিনে প্রায় ৮৯০০ টাকার বিনিময়ে শ্যুটিংয়ের অনুমতি মিলেছে। আর এই খবর সামনে আসার পর থেকেই বুধবার দুপুরে উত্তাল হয়ে ওঠে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। চার নম্বর গেটের কাছে আফসুর ইউনিয়ন রুমের সামনে পড়ুয়াদের একাংশ অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়ে। যদিও ইতিমধ্যেই বিবৃত জারি করে আফসো তরফে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ সামনে এলেও আদৌ সমস্যার সমাধান সম্ভব কিনা সেই বিষয়ে সুর চড়িয়েছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি। ফেসটুর চেয়ারপার্সন অরিত্র মজুমদারের কথায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন জায়গায় কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। অথচ পড়ুয়াদের কিছু না জানিয়েই আফসুর সাধারণ সম্পাদক লেটারহেডে তার নিজের সই দিয়ে টাকা নিয়ে নিচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, হোস্টেলে আর্টসের ছাত্রদের পাশাপাশি বিজ্ঞান আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্ররাও থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সব পড়ুয়া প্রশ্ন তুলেছে। এছাড়াও, কোন ধরনের দুর্নীতি বা তোলাবাজিকে গ্রহণ না করার কথা স্পষ্ট জানিয়ে বৃহস্পতিবার এই ইস্যুতে অল ফ্যাকাল্টি জিবি মিটিংয়ের কথাও বলা হয়েছে অরিত্র মজুমদারের তরফে।
অন্যদিকে এই ঘটনা তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে, যাদবপুরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সঞ্জীব প্রামাণিকের পক্ষ থেকে। তার বক্তব্য, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে যেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকে সেখানে কি করে সেই হোস্টেল টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেওয়া হল ?” শুধু তাই নয়, আফসুর নাম করে এসএফআই টাকা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, টাকা নিয়ে শুটিংয়ের অভিযোগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন তোলপাড় চলছে, তখন আফসুর সাধারণ সম্পাদকের তরফে বলা হয়, “গত এক সপ্তাহ আগে একটি প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের একজন অফিস বিয়ারারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কোন জায়গায় শুটিংয়ের অনুমোদন কোন ছাত্র সংগঠনই দিতে পারেনা, তাই এক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করানোর কাজটুকু আফসুর তরফে করা হয়েছিল।”
শুধু তাই নয়, সেই অনুযায়ী সহ উপাচার্য এবং ডিন অফ স্টুডেনসের অনুমতি সাপেক্ষে হোস্টেল সুপারিনটেনডেন্টকে হোস্টেলে শ্যুটিংয়ের বিষয়টি জানানো হয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তার আরোও সংযোজন, ওই প্রযোজনা সংস্থায় নিজ দায়িত্বে আফসুর ইউনিয়ন ফান্ডে ১৬ হাজার ৪০০ টাকা পাঠায়। পরবর্তীতে শুটিং বাতিল হওয়ায় সেই টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও শুভায়নবাবুর তরফে শ্যুটিংকে কেন্দ্র করে টাকা পয়সা সংক্রান্ত বিষয়ে সাফাই দেওয়া হয়েছে, তবে ক্ষোভ বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে পড়ুয়াদের একাংশের মধ্যে।