বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত একটি মামলা চলছে আদালতে। এবার ওই মামলায় এবার বিধাননগর পুরসভার কমিশনারকে ভার্চুয়ালি হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। দুটি আবাসিক বাড়ির নির্মাণকে কেন্দ্র করে ২০১২-১৩ সাল থেকে ওই মামলা চলছে। যখন এই মামলা শুরু হয়েছিল তখন রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার অধীনে ছিল কেষ্টপুরের চণ্ডীবেড়িয়া মেন রোড। ২০১৫ সালে এই জায়গাটি বিধাননগর পুরসভার অধীনে চলে আসে। ওই এলাকার দুই পরিবারের মধ্যে দুটি আবাসিক বাড়ির নির্মাণ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আইনি লড়াই চলছে। ওই বাড়ির বেআইনি অংশে বুলডোজার চালানোর জন্য আগেই নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ এবং ডিভিশন বেঞ্চ।
বিধাননগর পুরসভাকে চরম ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court)
আদালতের এই নির্দেশ আসার পর একটি বাড়ির মালিক পুরসভার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ অবমাননার মামলা দায়ের করে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হয়েছিলেন। গনেশ পাত্র নামে ওই মামলাকারীর অভিযোগ বিধাননগর পুরসভা তার বাড়িটি ভেঙে এমন হাল করেছে যে সেটি যেকোনো দিন ভেঙে পড়তে পারে। অন্যদিকে তার প্রতিবেশীর বাড়িটি কার্যত ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
গনেশ বাবুর অভিযোগ, ‘রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা আমার বাড়ির সিসি দিয়েছিল। তারপরেও বিধাননগর পুরসভা আমার বাড়ি ভেঙেছে। যদিও আমার প্রতিবেশী নকশা মেনে বাড়ি তৈরি করেনি, ছাড়েরও কোনো বালাই নেই। কলকাতা হাইকোর্ট তার বাড়ির বেআইনি অংশ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) নিজেদেরকেই বেআইনি অংশ ভেঙে দিতে বলেছিল। সেই কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তা দেখার কথা ছিল বিধাননগর পুরসভার। কিন্তু পুরসভা তা করেনি।’
মামলাকারীর অভিযোগ হাইকোর্ট বলা সত্বেও বেআইনি অংশ ঠিকমতো ভাঙা হচ্ছে কিনা পুরসভা তা নকশা মিলিয়ে দেখেনি। তিনি জানান, তার প্রতিপক্ষ বাড়ি ভাঙার কাজ ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু তিনি সুপ্রিম কোর্টে পুরসভার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন।
গণেশের আইনজীবী সুনন্দ রাহা জানিয়েছেন দু’দশক ধরে তার মক্কেলের প্রতিবেশীর বাড়িটিও বেআইনিভাবে রয়েছে। হাই কোর্টের দুটি বেঞ্চ বাড়িটির বেআইনি অংশ ভেঙে ফেলার জন্য পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু ওই নির্দেশ পুরোপুরি কার্যকর করা হয়নি। অপর পক্ষ হাই কোর্টের সেই নির্দেশের পর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে জানিয়েছিল, তারা নিজেরাই বাড়ির বেআইনি অংশ ভেঙে দেবেন।
আবেদনকারীর আইনজীবী সুনন্দবাবু এদিন জানিয়েছেন, ‘আমার বিরোধীপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) মুচলেকা দিয়ে জানিয়েছিল বেআইনি অংশ তারাই ভেঙে দেবেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিল ভাঙার কাজ ঠিক ভাবে হলো কিনা তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে হবে। সেই কাজ ২০২৩ সালে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী হতে হবে বলেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুরসভা যে হলফনামা দিয়েছে তা অসম্পূর্ণ এবং অস্পষ্ট।’ আইনজীবী এদিন জানিয়েছেন তাতেই সুপ্রিম কোর্ট বিরক্ত হয়ে ব্যাপক ভর্ৎসনা করেছেন বিধাননগর পুরসভাকে। একইসাথে বিধাননগর পুরসভার কমিশনারকে ভার্চুয়ালি হাজিরা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর এই বিষয়টি পুরসভা কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছেন। বিল্ডিং দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষ্ণা চক্রবর্তী এপ্রসঙ্গে বলেছেন,’ কতটা ভাঙা হয়েছে কতটা ভাঙা হয়নি তা খতিয়ে দেখতে হবে। অনেক পুরনো মামলা। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তাই মানতেই হবে।’ সবটা আইন মেনেই করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।