বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ‘রাষ্ট্রবাদী মুসলিম চাই না, সংখ্যালঘু ভোট চাই না’, গত সপ্তাহ থেকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) এই মন্তব্যে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। এমনকি জাতীয় রাজনীতিতেও ছড়িয়েছে উত্তাপ। বিরোধী দলনেতাকেই চেপে ধরেছে বিরোধীরা। তবে ঠিক কোন দৃষ্টিকোণ থেকে শুভেন্দু বলেছিলেন ‘সংখ্যালঘু ভোট চাই না’? ব্যক্তিগতভাবে কী তিনি এতটাই অপছন্দ করেন সংখ্যালঘুদের? উত্তরটা হবে ‘না’।
এই জুম্মাবারেও দানধ্যান চলছে শুভেন্দু অধিকারীদের (Suvendu Adhikari) ‘শান্তিকুঞ্জে’
রাজনীতির ময়দানে শুভেন্দুর মন্তব্য আর সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কাঁথির ‘শান্তিকুঞ্জে’র পরম্পরা কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। দীর্ঘদিন ধরেই মুসলমানদের পবিত্র জুম্মাবারে দানধ্যানের ব্যবস্থা করে অধিকারী পরিবার। বহুদিন যাবৎ এহেন প্রথা চলে আসছে। মহরমের পর এই শুক্রেও তার ব্যতিক্রম হল না।
কাঁথির অধিকারী বাড়ির ‘মেজ ছেলে’ শুভেন্দু অধিকারী। মুসলমানদের পবিত্র জুম্মাবারে দানধ্যান করা শান্তিকুঞ্জে’র পরম্পরায় চলে আসছে। বিরোধী রাজনীতিকরা বলছেন শুভেন্দু নাকি মুসলিম বিরোধী। এদিকে যাদের নিয়ে এত কথা সেই সংখ্যালঘু মহিলারাই এদিন অধিকারী বাড়ি থেকে সাহায্য নিয়ে বললেন, “এখান থেকে আমাদের খালি হাতে ফিরতে হয়নি কখনও। বরং মেজবাবু থাকলে বাড়তি দানধ্যান করেন।”
সেই মহিলাদের মধ্যেই একজন বললেন, “প্রত্যেক জুম্মাবারে অধিকারী বাড়ি থেকে দানধ্যান করা হয়। বড়বাবু (শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারীর বাবা) দু’-তিনশো টাকা দেন। আর যদি মেজবাবু বাড়িতে থাকেন তাহলে উনি ৫০০ টাকাও দিয়ে দেন।” তাহলে কর্মে এক আর কথায় আরেক কেন?
দিন কয়েক আগে এই অধিকারী বাড়ির মেজবাবুই প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, “রাষ্ট্রবাদী মুসলিম আর বলব না। যারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন, আমরা তাদের সঙ্গে থাকব। ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’ বন্ধ করো। সংখ্যালঘু ভোট চাই না।’ নেতার যে মুখের কথা নিয়ে এত চর্চা, বাস্তবের সাথে কিন্তু তার কোনো মিলই খুঁজে পান না অধিকারীবাবুকে যারা চেনেন সেই সব সংখ্যালঘুরা।
কেবল দানধ্যান নয়, বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার তমলুক জেলা সভাপতি শেখ সাদ্দাম ও কাঁথি জেলা সংখ্যালঘু মোর্চার সাধারণ সম্পাদক শেখ আসফাকউদ্দিনের কথাতেও কিন্তু উঠে এল ভিন্ন চিত্রই। তারাও বলছেন, “শান্তিকুঞ্জে আমাদের সঙ্গে কোনও দিনও পৃথক আচরণ করা হয়নি।”
শুভেন্দুর মন্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপির (BJP) তমলুক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন“এটা ওনার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা কথা। কারণ আমাদের দল বা বিরোধী দলনেতা সংখ্যালঘুদের জন্য যে পরিমাণ উন্নয়ন করছেন, সেই তুলনায় বিজেপিতে ভোট আসেনি।”
আরও পড়ুন: ‘বাঁদরের তৈলাক্ত বাঁশ ধরে ওঠানামার অঙ্ক..,’ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মুখ খুললেন মানিক ভট্টাচার্য
এদিকে ছেলের দেশ উত্তাল করা মন্তব্য প্রসঙ্গে শিশির অধিকারী বলেন, ‘শুভেন্দু কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে এ কথা বলেছে মাত্র। সংখ্যালঘুদের সঙ্গে শুভেন্দু বা আমার পরিবারের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ও নিজে দানধ্যান করে। সংখ্যালঘু মায়েদের হাতে প্ৰতি মাসে ছ’হাজার টাকা তুলে দেন। ওর দুই ভাই সৌমেন্দু আর দিব্যেন্দুও নিয়মিত দান করে। আমি নিজে ২০ জন সংখ্যালঘুর নিয়মিত চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।” প্রসঙ্গত এর আগে শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) বলেছিলেন, ‘যতদিন রাজনীতি করব বিজেপি করব। বিজেপি, সনাতন, ভারতীয় সংস্কৃতী এবং রাষ্ট্রবাদ, এখানেই আমার অবসর হবে। এটুকু আমি কমিটমেন্ট করতে চাই।’