বাংলা হান্ট ডেস্কঃ এবার ন্যায্য পাওনা চেয়েও মিলছে হুঁশিয়ারি! বকেয়া ডিএ (DA) নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এই কাল হল। পাল্টা ‘হুঁশিয়ারি’ মিলল ‘দিদির দূত’ (Didir Doot) -দের থেকে। পঞ্চায়েত ভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে ময়দানে নেমেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)। ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে দিদির দূত হয়ে জনতার দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছেন তৃণমূলের নেতা ,মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কেরা। বৃহস্পতিবার এই কর্মসূচীর আওতায় গঙ্গাজলঘাটির জেনাডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মালা রায়। সেখানেই বিস্ফোরক অভিযোগ উঠল ‘দিদির দূত’ এর বিরুদ্ধে।
এদিন ‘দিদির সুরক্ষাকবচ’ কর্মসূচির সাংসদ (TMC MP) মালা রায়ের (Mala Roy) সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গঙ্গাজলঘাটি ২ সাংগঠনিক ব্লকের তৃণমূল সভাপতি নিমাই মাজি-সহ শাসক দলের একাধিক নেতৃত্ব। উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দাবি, এদিন দিদির দূতের কাছে ডিএয়ের পাওনার কথা বলতেই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। শুধু তাই নয় প্রধান শিক্ষকের ওপর রীতিমতো চোটপাট করা হয়েছে বলেও উঠেছে অভিযোগ। বকেয়া মহার্ঘ ভাতা কবে মিলবে? ‘দিদির দূত’-দের এই প্রশ্ন করতেই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয় । পাশাপাশি তাঁকে শো-কজেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ জেনাডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (Head Teacher) সাক্ষীগোপাল মণ্ডলের।
শিক্ষকের দাবি মালা রায় জানান, “ডিএ মামলা আপাতত সুপ্রিম কোর্টে বিচারধীন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। ” পাশাপাশি তিঁনি বলেন, “অন্য রাজ্যে অনেক কিছু নেই। যে মানুষরা চাকরি করেন না, যাঁদের পারিবারিক অবস্থা ভালো নয়, তাঁদের জন্যও তো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাবছেন। তাঁদের প্রকল্পের জন্যই রাজ্যের হাতে টাকা না থাকায় বকেয়া ডিএ দেওয়া যাচ্ছে না।”
এরপরেই স্কুল ঘুরে দেখেন তৃণমূল সাংসদ সহ দিদির দূত রা। স্কুলের মিড ডে মিলের রান্নার ঘর, খাবার পরিদর্শন করার সময় সেখানে একটি অব্যবহৃত ফিল্টার পড়ে থাকতে দেখে রীতিমতো চোটপাট শুরু করেন তৃণমূল সভাপতি নিমাই মাজি। পরিস্থিতির কোনোরুপ বিচার না করে, পড়ুয়াদের সামনেই প্রধান শিক্ষককে ধমকাতে থাকেন। এরপর স্কুল অফিসে ফোন করে ‘দিদির দূত’ বলতে থাকেন, ‘আপনি অবিলম্বে শো-কজ করুন। আমি যেন দেখতে পাই।’
এরপর ঘটনা প্রসঙ্গে, মালা রায় জানান, ‘ প্রধান শিক্ষককে ডিএ নিয়ে যতটা চিন্তিত দেখলাম, স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে ততটা চিন্তিত নন। আমরা অতিথি এসেছি বাইরে থেকে, দিদির দূত হয়ে। কোথায় উনি বসে স্কুলের কথা বলবেন, স্কুলের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কথা বলবেন। পড়াশোনা কেমন হচ্ছে, সে কথা বলবেন। সেসব কথা না হলে আগেই তিনি ডিএয়ের কথা তুললেন। ডিএয়ের কথা তিনি তুলতেই পারেন। তিনি তাঁর কথা বলতে পারেন।’
তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, ‘কিন্তু আমি বললাম যে স্কুলের পড়ুয়ারা পড়াশোনা করছে না, স্কুল ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলে আপনিই জানাচ্ছেন, কেন স্কুল ছেড়ে চলে যাচ্ছে? আপনারা তাহলে ঠিকঠাকভাবে পড়াচ্ছেন না বা বাচ্চাদের প্রতি ঠিকঠাকভাবে নজর দিচ্ছেন না। মিড মে মিল খাচ্ছে কি, খাচ্ছে না, আজ ৪৫ জন পড়ুয়া হাজির ছিল। কিন্তু রান্না যেটা হচ্ছে, সেটা ৪৫ জনের মতো নয়। তার মানে মিড ডে মিলের ক্ষেত্রেও ঠিকঠাকভাবে নজরদারি হচ্ছে না।’
পাশাপাশি তিঁনি জানান, ‘এবার থেকে স্কুলের উপর নজর রাখবে তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রধান শিক্ষক নিজের ডিএ নিয়ে ভাবছে ৫০০ বার। ডিএ নিয়ে একটু ভাবুন ম্যাডাম, ডিএ নিয়ে একটু ভাবুন।’ তবে এই অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) জগবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘ওই স্কুল নিয়ে কোনও অভিযোগ মেলেনি। অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করা হবে।’