চাঁদা তুলে করা স্কুলবাড়ি দখল করে তৃণমূলের পার্টি অফিস! চাঞ্চল্যকর অভিযোগ শত্রুঘ্নর এলাকায়

বাংলা হান্ট ডেস্ক : এলাকায় নেই একটাও হাইস্কুল নেই। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে তৈরি করে চার কক্ষের একটি ভবন। কিন্তু বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতায় সেখানে স্কুল চালু সম্ভব হয়নি। তবে ফাঁকা পড়ে নেই সে বাড়ি। এখন সেখানে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় চলছে। এই অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। অবশ্য তৃণমূল (TMC) নেতৃত্ব সেই অভিযোগ অস্বীকারও করেছে। রানিগঞ্জের (Raniganj) নূপুর উপরপাড়া এলাকার ঘটনা। ওই ভবনে হাইস্কুল চালু করার দাবিতে গণসই সংগ্রহ অভিযান শুরু করে সিপিএম (CPM)।

এলাকা সূত্রে খবর, ১৯৮৭-তে প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, প্রাক্তন বিধায়ক তথা নূপুরের বাসিন্দা হারাধন রায় নূপুর উপরপাড়ায় হাইস্কুল তৈরির জন্য এলাকাবাসীর কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ শুরু করেন। শুধু এলাকাবাসীই নয়, তাঁদের পাশাপাশি, বল্লভপুর পেপার মিলের শ্রমিকেরা এক দিনের মজুরিও চাঁদা হিসেবে দেন। তার পরে তৈরি হয় ওই বিদ্যালয় ভবন। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই ভবনে প্রাথমিক ভাবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত জুনিয়র হাইস্কুল চালুর তোড়জোড় করা হয়। পরিকল্পনা ছিল, সেই স্কুল মাধ্যমিক স্তরেও উন্নীত করা হবে। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত শিক্ষা দফতরের অনুমোদন না মেলায় স্কুল চালু করা যায়নি।

সম্প্রতি ভবনটি নিয়ে শুরু হয় প্রবল রাজনৈতিক তরজা। সিপিএম নেতা মলয়কান্তি মণ্ডল জানান, ২০২০-সালে ওই ভবনের সামনে খুঁটি পুঁতে তৃণমূল দলীয় পতাকা টাঙিয়ে দেয়। মলয়বাবুর দাবি, ‘আমরা এর প্রতিবাদে গণসই সংগ্রহ করে ব্লক অফিসে জমা দিই। তার পরে পতাকা খুলে নেওয়া হয়।’ মলয়বাবু-সহ সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, ‘২০২২-এ আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের আগে তৃণমূল ভবনটিকে নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। এখন সেটা পুরোদস্তুর শাসক দলের কার্যালয়ে পরিণত হয়ে গেছে।’

tmc flg

স্থানীয় বাসিন্দা পরেশ বাউড়ি, মোহিতোষ রায়েরা জানান, নূপুর ও বেলুনিয়া দুটি পাশাপাশি গ্রাম। এই এলাকার পড়ুয়াদের পঞ্চম শ্রেণি থেকে পড়াশোনার জন্য তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার যাতায়াত করতে হয়। তার জেরে বৃদ্ধি পেয়েছে স্কুলছুটের পরিমাণও। বেলুনিয়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকান্ত দাস ও নূপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্যজিৎ দলুই দাবি করেন, ‘ওই ভবনটিতে হাইস্কুল চালু হলে এলাকার পড়ুয়ারা খুবই উপকৃত হবে। এই এলাকা হয়ে দুর্গাপুরের বেনাচিতি থেকে রানিগঞ্জে একটি মাত্র মিনিবাস যাতায়াত করে। সারা দিনে তিন বার করে করে আসে-যায় বাসটি। এতে পড়ুয়ারা খুবই সমস্যায় পড়ে। অনেকে টোটো, সাইকেলে চড়ে অথবা হেঁটে স্কুলে যেতে বাধ্য হয়।’

স্কুলের জন্য তৈরি ভবনে দলীয় কার্যালয়, এমন অভিযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক রুনু দত্ত বলেন, ‘তৃণমূলের সংস্কৃতিটাই হল লুটের। এখন স্কুলের জন্য তৈরি ভবনও লুট করে নিচ্ছে।’ বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিলীপ দে’র বক্তব্য, ‘তৃণমূল যে শিক্ষার বিরোধী, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।’


Sudipto

সম্পর্কিত খবর