চরম অভাবে মা রেখে এসেছিলেন অনাথ আশ্রমে! আজ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনকুবের তিনিই

বাংলা হান্ট ডেস্ক: জীবনে চলার পথে কার জন্য কি অপেক্ষা করছে তা কেউই বলতে পারেনা। পাশাপাশি, আজ যে একেবারেই সহায়সম্বলহীন ভাগ্যের ফেরে সেই আবার কাল হয়ে যেতে পারে কোটিপতি। ঠিক সেইরকমই এক ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন ইনিও। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহে যখন ইটালির মিলান শহর কার্যত বিধ্বস্ত, ঠিক সেই আবহেই নিজের চতুর্থ সন্তানকে নিয়ে কোনোমতে রাস্তায় রাস্তায় দিন কাটাচ্ছিলেন বিধবা গ্রাজিয়া রোকো।

এদিকে, ভাগ্যের ফেরে চতুর্থ সন্তানের জন্মের পাঁচ মাস আগেই মারা গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। এমতাবস্থায়, সন্তানের মুখে খাওয়ার তুলে দেওয়ার মত সম্বলও ছিলনা তাঁর। একটি কারখানায় কাজ করলেও সেখানকার যৎসামান্য আয় দিয়ে কোনোমতেই আর চলছিলনা। এমতাবস্থায়, উপায় না পেয়ে কার্যত বাধ্য হয়েই ছেলের জীবন বাঁচাতে তাকে অনাথ আশ্রমে রাখার সিদ্ধান্ত নেন গ্রাজিয়া।

তারপরেই সাত বছর বয়সি সন্তানকে নিয়ে শহরেরই “মার্টিনিট ইনস্টিটিউট” নামের এক অনাথ আশ্রমে পৌঁছে সেখানে তাকে রেখে আসেন গ্রাজিয়া। শুধু তাই নয়, একটি চিঠিও তিনি দেন অনাথ আশ্রম কর্তৃপক্ষকে। যেখানে লেখা ছিল, “আমার ছেলের যত্ন নেওয়ার মতো কেউ নেই।” এমনকি, ওই চিঠি দীর্ঘদিন যাবৎ আশ্রমে ফাইলবন্দি অবস্থায় ছিল।

এদিকে, অভাবের তীব্র তাড়নায় যে ছেলেকে একদিন অনাথ আশ্রমে রেখে এসেছিলেন তাঁর মা, সেই ছেলেই বড় হয়ে কার্যত তৈরি করে ফেলেন ইতিহাস। শুধু তাই নয়, বর্তমানে তিনি ইতালির দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি। আর আমরা যার প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করছি তিনি হলেন বিখ্যাত ধনকুবের লিওনার্দো দেল ভেচিও (Leonardo Del Vecchio)।

জানা যায় যে, অনাথ আশ্রমে মোট সাত বছর ছিলেন লিওনার্দো। তবে, মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তিনি আশ্রম ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন রোজগারের আশায়। পাশাপাশি, সেই সময় তিনি আবার তাঁর মায়ের সাথে থাকতেই শুরু করেন। মূলত, লিওনার্দোর তখন লক্ষ্য ছিল দক্ষ কারিগর হয়ে ওঠা। এমতাবস্থায়, একটি লোহার দোকানে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি, বাড়তি রোজগারের আশায় লিওনার্দো সহকর্মীদের জন্য দুপুরের খাবারও এনে দিতেন।

এদিকে, অভাবের তাড়নায় প্রতি দিন মায়ের রান্না করা বাঁধাকপির স্যুপ খেয়েই কাজ করতে আসতেন তিনি। তবে, দারিদ্র্যকে অত্যন্ত কাছ থেকে উপলব্ধি করা লিওনার্দো রীতিমতো প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, আর কোনো দিন অভুক্ত থাকবেন না তিনি। আর এই প্রতিজ্ঞাপূরণেই তীব্র পরিশ্রমের পর আজ লিওনার্দো পৌঁছে গিয়েছেন সাফল্যের শিখরে। বর্তমানে তিনি ফরাসি-ইটালীয় চশমা প্রস্তুতকারী সংস্থা এসিলর লাক্সোটিকা এসএ-র প্রধান।

শুধু তাই নয়, ৮৭ বছর বয়সি লিওনার্দোর এই চশমা সংস্থার মূল্য ৬৬০০ কোটি ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা)। তবে, এখানেই থেমে থাকতে চান না তিনি। বরং এখন তাঁর নতুন লক্ষ্য হল এই সংস্থার মূল্য বাড়িয়ে ১০ হাজার কোটি ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় যা ৮ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি) করা। এদিকে, যে লিওনার্দোকে একটা সময়ে দিনের পর দিন অভুক্ত থাকতে হত সেই লিওনার্দোই এখন হাজার হাজার পরিবারের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করেন।

মূলত, রে-ব্যান এবং ওকলে-র মতো চশমা প্রস্তুতকারী সংস্থার চশমার ফ্রেমও তৈরি করে লাক্সোটিকা। এছাড়াও, তৈরি করা হয় চোখের কৃত্রিম লেন্স। সারা বিশ্বে লাক্সোটিকার মোট ৮ হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। পাশাপাশি, একাধিক বিলাসবহুল সামগ্রী এবং চিকিৎসা বিষয়ক প্রযুক্তির সংস্থাতেও লিওনার্দো ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করেছেন।

যদিও, বিরাট এই সাফল্যলাভের পরও লিওনার্দো অত্যন্ত প্রচারবিমুখ। পাশাপাশি, ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবন নিয়ে কথা বলতেও তিনি স্বচ্ছন্দ নন। যদিও, তাঁর সংস্থার উন্নতিতে তাঁর অবদান সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। এমনকি, বর্তমানে কোটি কোটি টাকার সাম্রাজ্যের মালিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনও অনাথ আশ্রমে দেওয়া মায়ের সেই চিঠি সযত্নে নিজের কাছে রেখেছেন।

product 9188

এই প্রসঙ্গে লিওনার্দো জানান, একটা সময় দৈনিক ২০ ঘণ্টা করেও কাজ করতে হত তাঁকে। এমনকি, পরিশ্রম করতে গিয়ে হয়েছেন দুর্ঘটনার শিকারও। যার ফলে তিনি হারিয়েছেন তাঁর বাম হাতের তর্জনী। পাশাপাশি, লিওনার্দো আরও বলেছেন, তিনি সব সময়ই যা করেন তাতে সেরা হওয়ার চেষ্টা করেন। আর এভাবেই তিনি সকলের কাছে এক “দৃষ্টান্ত” হয়ে উঠেছেন।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর