বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিজেপির (Bharatiya Janata Party) সঙ্গে সাড়ে তিন বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে শুক্রবার তৃণমূল ভবনে গিয়ে তৃণমূল (All India Trinamool Congress) নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) আর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) উপস্থিতিতে তৃণমূলে ফিরে গেলেন মুকুল রায় (Mukul Roy)। বিজেপি ছাড়ার প্রসঙ্গে এক লাইনে মুকুলবাবু বলেছিলেন, ‘দলটা ভালো লাগছে না”। ব্যাস এরপরই আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে মুকুল। দলের প্রাক্তন সৈনিককে আবারও পেয়ে দলনেত্রী মমতা বলেন ‘ওল্ড ইস গোল্ড। মুকুল এবার মানসিক শান্তি পাবে।”
এরপর সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন যে, মুকুল আমাদের নিয়ে কোনও কটূ কথা বলেনি। আর ও নির্বাচনের আগে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু যারা নির্বাচনের সময় দলের সঙ্গে বেইমানি করে অর্থ আর ক্ষমতার লোভে চলে গিয়েছিল, সেই গদ্দারদের আর দলে নেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী গতকাল এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, মুকুল রায় ওনাকে আর দলকে নিয়ে কোনও কুমন্তব্য করেন নি। আর মুকুল রায় গদ্দারও না।
এবার দেখে নেওয়া যাক ২০১৭ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর মুকুল রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তৃণমূল দলকে নিয়ে কী কী বলেছিলেন?
বিজেপিতে যোগ দিয়ে মুকুল বলেছিলেন, ‘তৃণমূলে থেকে পাপ করেছি। বিজেপিতে এসে প্রায়শ্চিত্ত করছি। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে সারা বাংলা ঘুরছি। রাজ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম না করা পর্যন্ত প্রায়শ্চিত্ত হবে না।” বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর মুকুল রায় বিশ্ববাংলার লোগো নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্ব বাংলা রাজ্য সরকারের কোনও প্রতিষ্ঠান নয়। এই লোগোর মালিক স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।”
এমনকি মুকুল রায় তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অশিক্ষিত বলেও আক্রমণ করেছিলেন। মুকুল রায় বলেছিলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন গান্ধীজির অনশন নাকি রবীন্দ্রনাথ জল দিয়ে ভেঙেছেন। এমন অশিক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী আর কোথাও দেখিনি।” মুকুল রায় মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ ভ্রমণকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘আগে বুদ্ধবাবু বিদেশে গেলে উনি বলতেন হাওয়া খেতে যাচ্ছেন। আর এখন নিজেই ৪০-৪২ জন লোক নিয়ে মাঝেমধ্যেই বিদেশে চলে যাচ্ছেন।”
মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বিজেপির মুকুলবাবু বলেছিলেন, ‘মেট্রো ডেয়ারি বিক্রি করে মমতার দল কত টাকা কাটমানি খেয়েছে? এটার তদন্ত হোক আর বিচার হোক। বিলগ্নিকরণের মাস্টার মমতা। উনি নিজের মুখেই বলুক না তৃণমূল কত খেয়েছে?” বিধানসভার প্রার্থী হওয়ার পর মুকুল রায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘উনি লড়াই থেকে সরে গিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছে।” মুকুল রায় এও বলেছিলেন যে, মমতা আর সিপিএমের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই মুকুল রায় বলেছিলেন, ‘২০০৭ সালে মানুষ যখন মারা যাচ্ছিল, তখন আরেকদিকে চলচ্চিত্র উৎসবে ঘণ্টা বাজাচ্ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর ২০১৭ সালেও একই দৃশ্য। মানুষ ডেঙ্গিতে মরছে, আর মুখ্যমন্ত্রী নাচ-গান-খাওয়া, চলচ্চিত্র উৎসব করছেন। শুধু মুখ্যমন্ত্রী পাল্টেছে, চরিত্র না।” যাইহোক এখন সবকিছুই অতীত। মুকুল রায় এখন তৃণমূলের শোভা। আর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে মুকুল রায় তৃণমূল বা ওনাকে কটূক্তি করেন নি।