বাংলাহান্ট ডেস্ক : খাতায় কলমে এখন হেমন্তকাল। কালীপুজো মিটতে না মিটতেই কলকাতার শহরে আনাগোনা শুরু হয়েছে হিমেল পরশের। শীতকাল আরম্ভ হলেই প্রত্যেক বাঙালি আলমারি থেকে বের করতে শুরু করে সোয়েটার, জ্যাকেট ,মাফলার। বাড়ির মা- কাকিমারা শীতের জন্য ট্রাংক থেকে বার করেন লেপ-কম্বল। শীত পড়ার আগেই প্রত্যেক বাড়ির ছাদেই দেখা যায় রোদে দেওয়া হয়েছে ট্রাঙ্ক বা আলমারি থেকে বের করা কম্বল, লেপ। দোকানে দোকানেও উঁকি মারতে থাকে এই শীতের বন্ধুরা। বিভিন্ন দোকান ছেয়ে যায় তুলোয় মোড়া লাল কাপড়ে।
কিন্তু আপনাদের মনে কি এই প্রশ্ন কখনো জেগেছে যে লেপের কাপড় সব সময় কেন লাল রঙেরই হয়? এটা কি নিছকই কোন কাকতালীয় ঘটনা নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোন ইতিহাস? আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনে আমরা জেনে নেব এই বিষয়টি নিয়েই।
লেপ শিল্পের জন্য একটা সময় সারা ভারতবর্ষে বিখ্যাত নাম ছিল মুর্শিদাবাদ। মোলায়েম সিল্ক এবং মখমলের মাঝখানে লম্বা আঁশের কার্পাস তুলোর বীজ ছাড়িয়ে লাল রঙে চুবিয়ে শুকিয়ে ভরা হত। লাল রঙের হতো এই মখমল। এছাড়াও সৌরভের জন্য ছড়ানো হতো আতর। কিন্তু বর্তমান সময়ে মখমল খুবই দুর্মূল্য। বর্তমানে সাধারণ লেপে মখমল ব্যবহার করা না হলেও প্রচলিত আছে লাল কাপড়ের ব্যবহার।
নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম না থাকলেও আজও লেপের কারিগররা লেপ তৈরির সময় ব্যবহার করেন লাল কাপড়। লাল মখমলের কাপড় ব্যবহার করে লেপ তৈরির রীতি শুরু হয় বাংলা, বিহার, ওড়িশা-সহ অভিবক্ত বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদ কুলি খানের আমল থেকে। পরবর্তীকালে মুর্শিদ কুলি খানের মেয়ের জামাই নবাব সুজাউদ্দিন মখমলের বদলে লেপ তৈরিতে ব্যবহার শুরু করেন সিল্কের কাপড়ের।
পাশাপাশি বাংলার কিছু পুরনো লেপের কারিগর মনে করেন, লেপ তৈরীর সময় লাল কাপড়ের ব্যবহারের রীতি একটা সময়ে অনুসরণ করতেন নবাবরাও। অন্যদিকে, আবার কেউ কেউ মনে করেন, যেহেতু লেপ ধোয়া যায় না তাই লাল কাপড়ের আবরণ থাকলে তাতে ময়লা জমবে কম। আবার কারোর মতে, নেহাতই গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য লেপ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় উগ্র লাল রং। লেপ তৈরির ক্ষেত্রে লাল রঙের ব্যবহারের কোন নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক কারণ জানা না থাকলেও শীতের দুপুরে কিংবা হিমেল নিশিতে লাল লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাবার আনন্দ কিন্তু যুগ যুগ ধরে একই রয়ে গেছে।