বাংলা হান্ট ডেস্ক: সমগ্ৰ বিশ্বে সবথেকে বেশি চাল রপ্তানিকারী দেশ হিসেবে বিবেচিত ভারত (India) নন-বাসমতি কাঁচা চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফলে চালের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এমনকি, ইতিমধ্যেই এর ফলে একাধিক দেশ প্রভাবিত হয়েছে। কারণ, বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ চালের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল রয়েছে। এমতাবস্থায়, তারা চাল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য ভারতের কাছে আবেদনও করছে। মূলত, চালের ক্রমবর্ধমান দামের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই সিঙ্গাপুর (Singapore), ইন্দোনেশিয়া (Indonesia) এবং ফিলিপিন্স (Philippines) তাদের দেশে চাল রপ্তানি ফের শুরু করার জন্য ভারতের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে মিন্টের এক প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে যে, সিঙ্গাপুর ভারতকে ১,১০,০০০ টন চালের জন্য আর্জি জানিয়েছে। এদিকে এল নিনোর কারণে দেশে খাদ্য সরবরাহ সঠিকভাবে বজায় রাখতে গত জুন মাসে ভারত থেকে ১০ লক্ষ টন চাল আমদানির ঘোষণা করে ইন্দোনেশিয়া। পাশাপাশি, ফিলিপিন্সও চালের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল। এদিকে, সম্প্রতি জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি মানবিক কাজের জন্য ভারতের কাছে দুই লক্ষ টন চাল চেয়েছে।
শুধু তাই নয়, সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে, ভারতের চাল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞাকে বিপর্যয়কর হিসেবে বর্ণনা করে, জাতিসংঘ জানিয়েছে যে, করোনার মতো ভয়াবহ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য সরবরাহ প্রভাবিত হয়েছে এবং ভারতের এহেন পদক্ষেপ খাদ্য সরবরাহের নিরাপত্তাহীনতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। পাশাপাশি, ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশও চাল সহ কিছু কৃষিপণ্য সরবরাহের জন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনা করছে।
খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকারের প্রচেষ্টা: উল্লেখ্য যে, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির আবহে ভারতে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। যদিও, ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের মোদী সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে রপ্তানি নিষিদ্ধ সহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মূলত, আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সব রকম চেষ্টা করছে। পাশাপাশি, চলতি বছরের স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনবেন।
আরও পড়ুন: এবার কমবে টিভি দেখার খরচ, সস্তা হচ্ছে কেবল বিল! জনগনের কথা ভেবে সরকারের কাছে জানানো হল সুপারিশ
এই আবহে সিঙ্গাপুরের ফুড এজেন্সি (SFO) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, তারা চাল রপ্তানি আবার শুরু করার জন্য ভারতের সাথে আলোচনা করছে। সংস্থাটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, “বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন জাতের চাল আমদানি বাড়াতে আমদানিকারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এসএফএ। নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি পেতে সিঙ্গাপুর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছে।
আরও পড়ুন: নতুন বাইক-গাড়ি কেনার সময় কেন দেওয়া হয় দুটি চাবি? কারণ জানলে বাঁচাতে পারবেন বিপুল টাকা
নিষেধাজ্ঞা প্রতিবেশী দেশগুলির অসুবিধা বাড়িয়েছে: মূলত, গত ২০ জুলাই ভারত সরকার নন-বাসমতি কাঁচা চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বাসমতি চালের পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করতে এবং চালের অভ্যন্তরীণ মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। এদিকে, চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করার এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী চালের দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ও নেপাল সহ ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলি ভারতীয় চালের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। একই সঙ্গে আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ভাঙা চালের ক্রেতা।
এদিকে, অর্থনীতিবিদরা মনে করেছেন যে, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি আগামী কয়েক সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। যেকারণে চলতি অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিক পর্যন্ত সিপিআই (কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স) মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। অনুমান অনুযায়ী এই মুদ্রাস্ফীতি অগাস্টে ৬.৫ শতাংশের এর উপরে থাকবে এবং সেপ্টেম্বরে হ্রাস পেতে পারে।