বায়োমেট্রিক চালু হতেই ‘গায়েব’ ৮০ কর্মী! কোথায় গেল? পুরসভার ঘটনা ফাঁস হতেই হৈচৈ

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কর্মীদের উপস্থিতি জানতে খাতা-কলমের প্রচলন প্রায় উঠেই গিয়েছে। অধিকাংশ অফিসেই বর্তমানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি (Biometric Attendance System) ব্যবহার করা হয়। এবার এই সিস্টেম চালু করতেই রাজ্যের এক পুরসভায় দেখা গেল, একটানা ‘অনুপস্থিত’ ৮০ জন কর্মী। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে জোর শোরগোল পড়ে গিয়েছে।

বায়োমেট্রিক (Biometric Attendance System) শুরু হতেই ‘অনুপস্থিত’ ৮০ জন কর্মী

সম্প্রতি কর্মীদের উপস্থিতি জানতে বালুরঘাট পুরসভায় (Balurghat Municipality) বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করা হয়। এরপরেই দেখা যায়, একটানা ‘অনুপস্থিত’ ৮০ জন কর্মী। জানা যাচ্ছে, প্রত্যেক মাসে পুরনো হাজিরা খাতা দেখে যতজন কর্মীকে মাসে মাসে বেতন দেওয়া হতো, বায়োমেট্রিক চালু হওয়ার পর তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮০ জন কর্মী একটানা ‘অনুপস্থিত’।

একদা বামেদের দখলে থাকা বালুরঘাট পুরসভায় ২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)। সেই সময়ই দৈনিক মজুরিতে প্রায় ৬৫০ জন কর্মীকে নিয়োগ করে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড। দীর্ঘদিন ধরেই ওই নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে সরব বিরোধীরা। এবার বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ার পর একটানা ৮০ জন কর্মীর ‘অনুপস্থিতি’র খবর সামনে আসতেই ফের সরব হয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুনঃ SSC ২৬০০০ মামলায় ‘মেটা ডেটা’ খোঁজার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের! এই ‘মেটা ডেটা’ কী জানেন?

রিপোর্ট বলছে, বায়োমেট্রিক (Biometric Attendance System) শুরু হওয়ার পর ‘অনুপস্থিত’ ওই ৮০ জন কর্মীকে বেতন না দিতে হওয়ায় পুরসভার প্রায় ১২ লক্ষ টাকা বেঁচে গিয়েছে। বিরোধীরা ‘ভুয়ো নিয়োগ’ নিয়ে সরব হওয়ার পাশাপাশি বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, ওই ৮০ জন কর্মচারীর মাইনে এতদিন কার অ্যাকাউন্টে যেত, এর নেপথ্যে কারা জড়িত সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুরসভার পুরপ্রধান অশোক মিত্র।

অশোকবাবু বলেন, এখনই ওই ৮০ জন কর্মীকে ভুয়ো বলা যাবে না। পুরপ্রধানের কথায়, ‘স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আমরা বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করেছি। এর ফলে বেশ কিছু কর্মী নিজেদের উপস্থিতি জানাতে পারেননি। সেগুলি খতিয়ে দেখে আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি’।

Balurghat Municipality biometric attendance system

এই বিষয়ে বিজেপি নেতা বাপি সরকার বলেন, ‘এতদিন ধরে এত কর্মী, যাদের কোনও অস্তিত্ব নেই, কিন্তু তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। পুর প্রশাসন এটা জানে না, হতে পারে না। এতদিন তাঁরা জেনেবুঝেই টাকা দিয়েছেন। এখন বিষয়টি সামনে চলে আসায় নিজেরা গা বাঁচাতে চাইছেন। আমরা বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাইব’। ভুয়ো কর্মীদের অ্যাকাউন্টে কীভাবে টাকা গেল সেটা খতিয়ে দেখা এবং পুরসভার অ্যাকাউন্টে সেই টাকা ফেরানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বর্তমান পুরবোর্ডকে। এই দাবিতে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা আরএসপি নেত্রী সুচেতা বিশ্বাস।

এদিকে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে পুরসভা সূত্র উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে, বর্তমানে সেখানে প্রায় ৮০০ জন দৈনিক মজুরির শ্রমিক আছেন। তাঁদের বেতনের জন্য প্রত্যেক মাসে নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে পুরসভা। এই আবহে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি (Biometric Attendance) চালু হওয়ার পরেই দেখা যায়, প্রায় এক মাস ধরে ‘অনুপস্থিত’ ৮০ জন কর্মী। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন পুরপ্রধান। এরপর কী সামনে আসে সেটাই দেখার।

Sneha Paul
Sneha Paul

স্নেহা পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াকালীন সাংবাদিকতা শুরু। বিগত ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত। রাজনীতি থেকে বিনোদন, ভাইরাল থেকে ভ্রমণ, সব ধরণের লেখাতেই সমান সাবলীল।

সম্পর্কিত খবর