আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেই কার্যত অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলল শ্রীলঙ্কা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক মন্দার কারণে হাহাকার চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ইতিমধ্যেই আকাশ ছুঁয়েছে সেখানে। যার ফলে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছেন মানুষ। যদিও, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থাকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে প্রতিবেশী দেশ ভারত ক্রমাগত সাহায্য করছে।

তবে, হাজারও প্রতিকূলতার মধ্যে সুখবর হল শ্রীলঙ্কা এখনও পর্যন্ত যা অসম্ভব ছিল তা কার্যত অর্জন করে ফেলেছে। হ্যাঁ, এই অর্থনৈতিক সঙ্কটের সন্ধিক্ষণে সেখানকার মানুষ জাত এবং ধর্মের প্রাচীর ভেঙে একত্র হয়েছেন। সিংহলি, তামিল ও মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মোর্চা খুলেছেন।

   

এমনকি, শ্রীলঙ্কার নতুন প্রজন্মও রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই সবের ফলে শ্রীলঙ্কার জাতিগত বিভাজন সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। মূলত, শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মধ্যে জাতিগত বিভেদ পরিলক্ষিত হয়েছিল। রাজাপাকসে এবং তাঁর ভাই মাহিন্দা উভয়েই এটি শেষ করার জন্য কিছুই করেননি।

এমনকি, ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও এটিতে কোনো লাগামটানা হয়নি। এই প্রসঙ্গে ইংরেজি সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা বর্তমানে স্লোগান দিচ্ছেন, “আমরা শ্রেণি দ্বারা বিভক্ত নই, আমরা জাতি দ্বারা বিভক্ত নই”।

“আমরা ভারত সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ”:
সম্প্রতি তামিল সাংসদে এমএ সুমন্থিরান বলেছেন, মূলত বর্তমান অতীতকে ফিরে দেখার সুযোগ দেয়। এই কারণেই তিনি বিনয়ের সাথে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিনের শুধু শ্রীলঙ্কার তামিলদের জন্য খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ পাঠানোর প্রস্তাব অস্বীকার করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে সুমন্থিরন শনিবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “আমরা ভারত সরকার কর্তৃক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ এবং আমরা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর সহায়তার প্রস্তাবকেও স্বাগত জানাই। কিন্তু সেই সাহায্য এই সময়ে সমস্ত শ্রীলঙ্কার জন্য হওয়া উচিত, শুধু তামিলদের জন্য নয়। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

“রাজপাকসেকে যেতেই হবে”:
শনিবার কলম্বোর গল ফেসে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে। এই প্রসঙ্গে একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, “আমরা এখানে এটা দেখাতে এসেছি যে জনগণ একইসঙ্গে আছে এবং এই দুর্নীতি চলতে পারে না। প্রথমে তাঁকে যেতে হবে, তারপর সব রাজাপাকসেকে যেতে হবে। তারপর দেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে।” পাশাপাশি, এই প্রসঙ্গে সামাগি জন বালাবেগায়া (এসজেবি)-র নেতা সংসদে বলেছেন, “রাজপাকসের পদত্যাগের জন্য জনগণের দাবির প্রতি সরকারের মনোযোগ দেওয়া উচিত।”

অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের প্রস্তুতি:
শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দল, এসজেবি গত শুক্রবার ঘোষণা করেছে যে, অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি জনসাধারণের উদ্বেগ মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকারের বিরুদ্ধে তারা অনাস্থা প্রস্তাব আনবে। পাশাপাশি, রাষ্ট্রপতি এবং পুরো রাজাপাকসে পরিবারের পদত্যাগের দাবিতে দ্বীপরাষ্ট্র জুড়ে চলমান গণবিক্ষোভকে সমর্থনও করেছে সেদেশের বিরোধী দল।

srilanka 1 2

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক অব্যবস্থার কারণে সঙ্কটের সমাধান এবং রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে সমাজের সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছেন শ্রীলঙ্কায়। যদিও, এই প্রসঙ্গে রাজাপাকসে পদত্যাগের দাবি মানতে অস্বীকার করেছেন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর