এমএ, বিএড করেও চালাতে হচ্ছে টোটো! বাংলার বুকে ফুটে উঠল শিক্ষিত বেকারের দুর্দশা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়োগের দুর্নীতির মামলায় সারা রাজ্য রাজনীতি তোলপার। ঘটনার তদন্তে সামনে আসছে টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাওয়ার ঘটনা। এই ঘটনার মাঝেই এক অন্য বিরহের কাহিনী। এমএ পাশ করে বিএড কমপ্লিট করেও চাকরি না পেয়ে টোটো চালাতে বাধ্য হচ্ছেন এক যুবক। যে রাজ্যে মেধা নয় টাকার বিনিময় সরকারি চাকরির পাচ্ছেন অযোগ্য প্রার্থীরা সেখানে এই ধরনের উচ্চ শিক্ষিত যুবকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে একবারও কি ভেবে দেখেছেন আমাদের রাজ্যের রাজনীতিবিদরা?

হরিণঘাটার বাসিন্দা বকুল দেবনাথ। ২০১৫ সালে এমএ পাস করার পর আপার প্রাইমারি স্কুলে (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) শিক্ষকতার যোগ্যতা নির্ণায়ক টেট পরীক্ষায় বসেন। কিন্তু বিএড না থাকায় ডাক পাননি মৌখিক পরীক্ষায়। পরের বছর যখন তিনি বিএড পড়ছেন নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের জন্য এসএসসি পরীক্ষা হয় সেই সময়। ব্যাস সেখানেই শেষ। এরপর নানা দুর্নীতি মামলার জন্য রাজ্যে সংঘটিত হয়নি টেট বা এসএসসি পরীক্ষা। বন্ধ হয়ে গেছে সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া।

হরিণঘাটায় নগরউখরা পঞ্চায়েতের মহাদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা বকুল দেবনাথ। বাবা মা তাঁতের কাজ করে পড়াশোনা শিখিয়েছেন তিন ভাইকে।দাদা কল্যাণী মহকুমাশাসকের দফতরে চাকরি করছেন, ছোট ভাই কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি পেয়ে এখন রয়েছেন দিল্লিতে। শিক্ষক হতে চাওয়া বকুলের এখনো জোটেনি কোন কাজ। শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে করা হয়নি অন্য কোন পরীক্ষার প্রস্তুতি। এদিকে বাড়ছে বয়স, সংসারের দায়িত্ব। তাই উপায় না পেয়ে করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মশলা বিলি করতে বেড়িয়ে পরেন বকুল। কিন্তু তাতে আর কত টাকা রোজগার? বাড়ি থেকে কিছু টাকা নিয়ে ও ধার দেনা করে কিনে ফেলেন একটি টোটো। বাজারে হয়ে যায় বড় পরিমান দেনা। তাই এখন বাধ্য হয়ে টোটো নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকেন যাত্রীরা অপেক্ষায়।

বকুলের কথায়, “পরীক্ষা দিলেই যে চাকরি হবে এমন মানে নেই। কিন্তু আমি তো পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগই পেলাম না। কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির ঘটনা সামনে আসার পর এখন সন্দেহ হচ্ছে এ রাজ্যে আদৌ মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া যায় কিনা!”

শুধু বকুল নয়, এই ধরনের লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী ছড়িয়ে আছে সারা বাংলা জুড়ে। যারা উচ্চশিক্ষিত হওয়ার পরেও শুধুমাত্র চাকরির অভাবে সংসারের চাহিদা পূরণের জন্য হাতে তুলে নিয়েছেন টোটোর স্টিয়ারিং বা দিনমজুরের কাস্তে। এত ঘটনা দেখার পরেও কি হুশ ফিরবে না রাজ্যের প্রশাসনের প্রধানদের? বকুলের মত ছেলেদের শুধু প্রশ্ন এটাই!

Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর