বাংলা হান্ট ডেস্কঃ শনিবার কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal Corporation) অধিবেশন কক্ষেই তুমুল মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল এবং বিজেপির (TMC-BJP) কাউন্সিলরগণ। সেই মারামারি থামাতে গিয়ে অবস্থা কাহিল হয় কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim)। যদিও পরে তৃণমূল-বিজেপির হাতাহাতির ঘটনায় নিজের দলের কাউন্সিলরের পাশে দাঁড়ান মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
কলকাতা পুরসভার অধিবেশনে ওই ঘটনার পর শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন ফিরহাদ। সেখানে তিনি বলেন, “আত্মসম্মানে আঘাত লাগলে মাথা ঠাণ্ডা রাখা সম্ভব নয়।” বিজেপি কাউন্সিলরেরা মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চোর বলে অসম্মান করেছেন বলেও তোপ দাগেন তিনি। “আমাকে চোর, নেত্রীকে চোর, অভিষেককে চোর সবাইকে চোর বানানো হয়েছে। কেন কী এমন অন্যায় করেছি? কোনটা প্রমাণিত হয়েছে?” প্রশ্ন ফিরহাদের।
মেয়র আরও বলেন, ‘শাসকদলকেই বিরোধীদের ভূমিকা পালন করতে হয়। শহরে কোথায় কোন সমস্যা রয়েছে কোথায় জল নেই, রাস্তা মেরামত দরকার সেই সমস্ত আমাদের কাউন্সিলররাই বলছে। বিরোধীদের একটাই কাজ, শুধু মিডিয়ায় শিরোনামে থাকা।
আরও পড়ুন: হলিডে তালিকায় রবিবার, তবে ক্যালেন্ডারে সোমবার! সোমবার কী ছুটি থাকছে রাজ্যে?
ফিরহাদের দাবি, বিজেপি কাউন্সিলররা তৃণমূলের নেতানেত্রীদের প্রমাণ ছাড়াই চোর বলে তাদের সামাজিক সম্মানহানি করছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলে মেয়রের দাবি, “আমরা মেহুল চোকসি, বিজয় মাল্য বা নীরব মোদীর সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তারা কখনই ‘মোদী চোর’ বলি না, কারণ আমরা সব পদকে সম্মান দিতে জানি,”। তবে গতকালের ঘটনার তীব্র বিরোধীতাও করেন মেয়র।
কী ঘটেছিল? শনিবার পুরসভার মাসিক অধিবেশন ছিল। সেখানেই শাসক-বিরোধীর মারামারিতে শোরগোল পড়ে যায়। এদিন প্রথমে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের (Sajal Ghosh) সঙ্গে মারামারি শুরুর হয় ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম বসুর।
আরও পড়ুন: বিশ্বকর্মা পুজোতে কেমন থাকবে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া? মন খারাপ করা খবর দিল হাওয়া অফিস
অধিবেশনে পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা বলেন, “বিরোধীদের প্রশ্ন কোথায়?” এরপর মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিরোধী বেঞ্চের দিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এখন বিরোধীরা প্রশ্নই করেন না। তাই আমাদের কাউন্সিলরদেরই প্রশ্ন করতে হয়।” একথা শোনা মাত্র ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল বলেন, “বিরোধীরা প্রশ্ন করলেও উত্তর দেওয়া হয় না।”
তবে চেয়ারপার্সন তাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, প্রশ্ন করলে উত্তর দেওয়া হবে। মেয়র সজল ঘোষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আপনি প্রশ্ন জমা দিন, আমরা আপনাদের সব প্রশ্নের জবাব দেব।’’ এরপর পাল্টা সজল ফের বলেন, ‘‘টেন্ডার দুর্নীতি নিয়ে আমি বিগত অধিবেশনে প্রস্তাব জমা দিয়েছিলাম। সেই প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়নি। আসল কথা হল পুরসভা পরিচালনার দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তারাই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।’’
এর পরই নাকি হই হট্টগোল শুরু করেন শাসকদলের কাউন্সিলরেরা। সজল ঘোষের কাছের আসনে বসে ছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম বসু। এরপর সজল ঘোষের দিকে এগিয়ে যান তিনি। তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতি। বিজেপির অভিযোগ, হঠাৎই সজলকে ধাক্কা দেন অসীম। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে বিজেপির বিজয় ওঝা। সামনা-সামনি চলে আসেন তৃণমূল কাউন্সিলররাও।
বিজেপির আরও অভিযোগ, হাতাহাতি চলাকালীন তৃণমূল কাউন্সিলর সুদীপ পোল্লে নাকি সজল ঘোষকে ঘাড়ে চেপে ধরেন। ধুন্ধুমার বেঁধে যায়। ক্ষুব্ধ হয়ে অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান চেয়ারপার্সন মালা রায়। পরে অবশ্য পুর-সদস্যদের অনুরোধে তিনি ফিরে আসেন। কাউন্সিলরদের উদ্দেশে চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘এটা মারামারি করার জায়গায় নয়। এমন কাজ করতে চাইলে হয় নরদান পার্কে যান, নয় লেবুতলা পার্কে যান।’
ওদিকে সজলের উপর আক্রমণ করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে অধিবেশন বয়কট করেন গেরুয়া কাউন্সিলরেরা। ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অসীম বলেন, সজলই গালিগালাজ করে সভাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছেন। অধিবেশন কক্ষের মধ্যেই এইরকম মারামারির ঘটনা নিয়ে সজল এবং অসীম দুই কাউন্সিলরের কাছেই জবাব তলব করেছেন পুর চেয়ারপার্সন মালা। অন্যথায় কড়া পদক্ষেপ গ্রহণেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। কলকাতা পুরসভার ইতিহাসে এই ঘটনা যে একেবারেই নজিরবিহীন তেমনটাই মত পুরসভার আধিকারিকদের একাংশের।