বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ফের সুপ্রিম ধাক্কা তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অম়ৃতা সিনহার (Justice Amrita Sinha) বেঞ্চ থেকে নিয়োগ মামলা সরানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তবে শুক্রবার নেতার সেই দাবি খারিজ করে দিলেন শীর্ষ আদালতের (Supreme Court) বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।
অভিষেকের অভিযোগ ছিল, বিচারপতি সিনহার এজলাসে মামলার শুনানি চলাকালীন তিনি যে ধরনের পর্যবেক্ষণ জানাচ্ছিলেন, তা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ায় তার মানহানি ঘটছে। তবে এদিন সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল বিচারপতির পর্যবেক্ষণ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হবে না। পাশাপাশি মামলা সরানোর বিষয়েও সর্বোচ্চ আদালত কোনও পদক্ষেপ করবে না এমনটাই জানিয়ে দেওয়া হয়।
বিচারপতি খান্নার মন্তব্য, বিচারপতি সিনহা কী বলছেন, তার পর্যবেক্ষণ কি সেসব শীর্ষ আদালতের কাছে বিবেচ্য নয়। তাই এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করবে না। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাতেও হস্তক্ষেপ করা হবে না সর্বোচ্চ আদালত।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর মাসে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের (Leaps and Bounds) সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তার স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সংস্থার সমস্ত ডিরেক্টরের সম্পত্তির হিসেব আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। সম্প্রতি মুখবন্ধ খামে ৫ হাজার পৃষ্ঠার রিপোর্ট আদালতে পেশ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। এরপরই একাধিক মন্তব্য করেন বিচারপতি।
আরও পড়ুন: শীতের সন্ধ্যায় জমিয়ে ফ্রায়েড মোমো! জলপাইগুড়ির ক্যাফেতে হাজির বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, তারপর?
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি নিয়ে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ২০১৪ সালের পর থেকে সম্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে অভিষেকের। ইডিকে বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘‘আপনাদের কথা মতো যে পরিমাণ নথি জমা পড়েছে, তা বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদি সম্পত্তির পরিমাণ কম হত, তা হলে এই নথি আসত না। এটা ঠিক তো?’’
প্রশ্ন করে বিচারপতি বলেন, ‘‘আদালত যা জানতে চাইছে, তা কি আপনারা খুঁজে দেখেছেন? আয়ের উৎস কী? সেই ক্ষমতা আইন আপনাদের দিয়েছে। বলা ভাল, এটাই আপনাদের তদন্তের মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত।’’ আইনজীবী বলেন, আয়ের উৎস নিয়ে তারা অপরাধ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছেন। ইডিকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনাদের তদন্তে আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।’’
এরপরই আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘‘অভিষেকের বেশির ভাগ সম্পত্তি ২০১৪ সালের পর থেকে বৃদ্ধি হয়েছে। আবার এই সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছে।” বিচারপতি সিনহার প্রশ্ন, “দুটোর মধ্যে কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখেছেন?’’ বিচারপতি সিনহার সেই সব পর্যবেক্ষণই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিরোধীরা অনেকে আবার কলকাতা হাইকোর্টের ইউটিউব চ্যানেল থেকে সেই ফুটেজ সংগ্রহ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এই নিয়ে আপত্তি করে এদিন সুপ্রিম কোর্টে একটি পাঁচ পৃষ্ঠার রিপোর্ট জমা দেন অভিষেকের আইনজীবী। তবে সম্মানহানির ইস্যু তুললেও কোনও সুরাহা হল না। বিচারপতি সিনহার পর্যবেক্ষণ নিয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করল না কলকাতা হাইকোর্ট। যদিও সুপ্রিম কোর্টের জানিয়েছে, হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের কোনও নির্দেশ নিয়ে অভিষেকের কিছু বক্তব্য থাকলে তিনি অবশ্যই ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করতে পারেন।