বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারত-আমেরিকা (India-America) সম্পর্কে জট কাটার নতুন ইঙ্গিত মিলল। ভারতে আমেরিকার হবু রাষ্ট্রদূত সার্জিয়ো গোর (Sergio Gor) বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা এগোচ্ছে এবং বিশেষ করে আমেরিকার তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য ভারতে বিক্রির বিষয়ে কথা হচ্ছে। গোরের দাবি, সম্ভাবনার কোনও শেষ নেই, বাজার সম্প্রসারণের অসংখ্য সুযোগ রয়েছে এবং আমেরিকা সেগুলিকে কাজে লাগাতে চায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত গোর বর্তমানে হোয়াইট হাউসের প্রেসিডেন্সিয়াল পার্সোনেল অফিসের প্রধান এবং গত অগস্টে তাঁকে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
দূরত্ব কমছে ভারত আমেরিকার মধ্যে? (India-America)
এমন সময়ে এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ যখন রাশিয়ার (Russia) উপর আমেরিকার কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করতে মস্কোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক পদক্ষেপ নিয়েছে ওয়াশিংটন। এর প্রেক্ষিতেই রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির কারণে আমেরিকা নয়াদিল্লির অধিকাংশ পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়েছে, যা মোট ৫০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও ভারত রুশ তেলের আমদানি অব্যাহত রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন তেলের প্রস্তাব বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার উপর ভারতের নির্ভরতা কমাতেই আমেরিকা এই কৌশলী পদক্ষেপ নিচ্ছে (India-America)।
একই সঙ্গে, গোর ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বছরের শেষে ‘কোয়াড’-এর বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে আসতে পারেন (India-America)। ভারত, আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার চতুর্দেশীয় অক্ষ ‘কোয়াড’-এর উদ্দেশ্য হল ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের একাধিপত্য ঠেকানো। এ বছরের শেষের দিকে ভারতের মাটিতেই এই সম্মেলন হওয়ার কথা। যদিও ট্রাম্পের সফরসূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি, গোর জানিয়েছেন যে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।
চিনের প্রভাব রুখতে ওয়াশিংটনের এই কূটনৈতিক বার্তা বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। সম্প্রতি SCO বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের ঘনিষ্ঠতা বিশ্বরাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। তখনই মনে করা হচ্ছিল, আমেরিকাকে বার্তা দিতেই এই তিন শক্তি একসঙ্গে এগোচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটেই ভারতে ট্রাম্পের সম্ভাব্য সফর এবং সার্জিয়ো গোরের মন্তব্যকে আমেরিকার পাল্টা কূটনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে (India-America)।
ভারত-আমেরিকা (India-America) সম্পর্কে টানাপড়েনের ছায়া থাকলেও গোর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বন্ধুত্বের ভিত্তি অনেক গভীরে প্রোথিত। তাঁর কথায়, “শুল্ক নিয়ে সম্পর্কে সামান্য ওঠাপড়া থাকলেও ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব অনেক বেশি শক্তিশালী এবং এই বন্ধুত্ব বহু দশকের।” কূটনৈতিক মহল মনে করছে, গোরের বক্তব্যের মাধ্যমে আমেরিকা আসলে এ বার্তাই দিতে চাইছে যে, নয়াদিল্লির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার তারা, এবং চিনের তুলনায় ওয়াশিংটনই ভারতের স্থায়ী বন্ধু।