বাংলা হান্ট ডেস্কঃ প্রথমে সিবিআই তারপর ইডি (Enforcement Directorates)। গত নভেম্বর মাসে চাকরি বিক্রির অন্যতম দালাল প্রসন্ন রায়কে (Prasanna roy) জামিন দেয় সুপ্রিম কোর্ট। যদিও প্রসন্নর কপালে সুখ দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি। তিন মাস যেতে না যেতেই এসএসসি দুর্নীতি মামলায় ফের ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়কে গ্রেফতার করে ইডি। আর এবার সেই প্রসন্নকে নিয়েই আদালতে বিস্ফোরণ ঘটালো এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
বুধবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে প্রসন্নের মামলার শুনানিতে বিস্ফোরক সব তথ্য পেশ করে ইডি। ইডির দাবি, প্রসন্ন রায়ের নামে অন্তত ২০০টিরও বেশি ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্টের হদিস মিলেছে। যাতে জমা পড়েছে ৭০ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, প্রসন্নর নামে ১০০টিরও বেশি সংস্থা রয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে ইডি।
কী করে এত টাকা এল প্রসন্নর কাছে? তাহলে কী সবটাই চাকরি বিক্রির টাকা? উঠছে প্রশ্ন। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে সিবিআই এর হাতে গ্রেফতার হন প্রসন্ন রায়। জানা যায়, সম্পর্কে তিনি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভাগ্নি-জামাই। তার অফিসে তল্লাশি করে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে৷ রংমিস্ত্রি থেকে দুবাইয়ের হোটেল মালিক। প্রসন্নর উল্কাগতির উত্থানেই কার্যত চোখ কপালে ওঠে গোয়েন্দাদের।
আদালতে ইডি জানিয়েছে বিপুল সম্পত্তিও কেনাবেচা করেছেন প্রসন্ন। কম দামে সম্পত্তি কিনে বেশি দামে বিক্রির কাজের সাথেও প্রসন্ন যুক্ত ছিল বলে জানা যায়। ওদিকে কেবল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই নীয়, আরও একাধিক নেতার সঙ্গে তার সম্পর্কও ছিল ঘনিষ্ঠ। শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গেও তার নিবিড় সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। তাকে জেরা করার পরে নানা তথ্য় উঠে এসেছে। নিয়োগ দুর্নীতির টাকা হাতবদল হওয়ার আগে এই প্রসন্নর কাছেই যেত বলেও দাবি করে তদন্তকারী সংস্থা।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে প্রসন্নর বাড়ি এবং অফিসে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া সেই নথির ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে ইডি। প্রসন্নকে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরাও দিতে বলা হয়েছিল। যদিও প্রসন্ন ইডি দফতরে যাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
এরপর গত সোমবার ফের তাকে জিজ্ঞাবাদের জন্য তলব করে ইডি। সেখানে দিনভর জেরা করা হয় তাকে। কিন্তু তার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় এসএসসি দুর্নীতি মামলায়l এবার তাকে গ্রেফতার করে ইডি। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে SSC দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রসন্ন রায়। পরে তাকে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতেও হেফাজতে নেয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
এর আগে চাকরি দুর্নীতিতে মিডিলম্যান হিসেবে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে দাবি করে সিবিআই। উত্তর ২৪ পরগনা ও আশেপাশের এলাকার চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে তা তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পাঠাতেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন: সন্তু পানের পর আরেক সাংবাদিক! এবার প্রকাশ সিন্হার বাড়িতে পুলিশ, কী কারণে চলছে তল্লাশি?
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, শুধুমাত্র পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই নয়, পাশাপাশি এসপি সিনহা, তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা সহ শিক্ষা দফতরের বহু আধিকারিকেরও তিনি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। এর আগে আদালতে সিবিআই চার্জশিট দিয়ে জানায়, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে তা রাঘব বোয়ালদের কাছে এই প্রসন্নই পৌঁছে দিতেন। সম্প্রতি প্রসন্নর বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত প্রসন্নর ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।