বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বাংলায় এসআইআর (SIR) ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যের সংশোধনাগারগুলিতে তৈরি হয়েছে নতুন ধোঁয়াশা। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় দমদম জেল থেকে বারুইপুর, বসিরহাট থেকে বর্ধমান, সব সংশোধনাগারেই বন্দিদের মধ্যে একটাই প্রশ্ন, এসআইআরে আমাদের কী হবে? এই প্রশ্নে বিপাকে পড়েছেন তাঁদের পরিবারও।
বিশেষ নিবিড় সমীক্ষায় (SIR) কী হবে জেল বন্দিদের?
খুনের দায়ে দমদম জেলে বন্দি বীরভূমের আলিম। বারুইপুরের আমির আলি জড়িয়ে আছেন একাধিক ছিনতাই ও ডাকাতির মামলায়। এসআইআর (SIR) শুরু হওয়ার পর এখন তাঁরা কী করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় তাঁদের পরিবার। অভিযোগ, জাতীয় নির্বাচন কমিশন বন্দিদের বিষয়ে কোনও পরিষ্কার নির্দেশই দেয়নি, ফলে প্রায় প্রতিটি সংশোধনাগারেই তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তার পরিবেশ।
রাজ্যের ৫৯টি সংশোধনাগারের মধ্যে রয়েছে ৭টি সেন্ট্রাল কারেকশনাল হোম, ৩টি ওপেন কারেকশনাল হোম, ৫টি স্পেশাল কারেকশনাল হোম, ১টি ওম্যান কারেকশনাল হোম, ১২টি জেলা সংশোধনাগার এবং ৩১টি উপ-সংশোধনাগার। বিচারাধীন ও দোষী সাব্যস্ত মিলিয়ে বন্দির সংখ্যা লক্ষাধিক। তাঁদের ভোটাধিকার এবং এসআইআর (SIR) সংক্রান্ত অধিকার নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।
কারা দপ্তরের এক কর্তার থেকে জন্য গিয়েছে, পরিজনরা এসআইআরের (SIR) ফর্ম নিয়ে এলে সংশোধনাগারের নিয়ম মেনেই সেই ফর্ম বন্দিদের দিয়ে পূরণ ও সই করিয়ে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। মূলত বিচারাধীন বন্দিদের পরিজনরাই এই ফর্ম নিয়ে আসছেন বলে জানানো হয়েছে। তবে দোষী সাব্যস্ত বন্দিদের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছে দপ্তর। এছাড়া দপ্তরসূত্রে দাবি, বন্দি অবস্থায় ভোট দিতে না পারলেও ভোটার তালিকায় নাম থাকা বা এসআইআর-এর (SIR) প্রক্রিয়া অনুসরণ করার অধিকার তাঁদের রয়েছে। সংশ্লিষ্ট নথিতে তাঁদের সই করাতে পরিজনদের সহায়তাই ভরসা।
হাই কোর্টের আইনজীবী তাপস ভঞ্জ জানান, “বন্দির দুটি ধরন, যথা- বিচারাধীন এবং দোষী সাব্যস্ত। দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত দোষীরা ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না, তবে ভোট দেওয়ার অধিকার তাঁদের আছে। প্যারলে বাইরে এলে ভোট দিতে পারবেন। বিচারাধীন বন্দিরা জামিনে ছাড়া পেলে ভোট দেওয়ার অধিকার পাবেন।” এই প্রসঙ্গে এসআইআর (SIR) নিয়ে তিনি স্পষ্ট জানান যে, “এসআইআর প্রক্রিয়ায় কোনও বাধাই নেই। যেকোনও বন্দির নাম ভোটার তালিকায় রাখতেই হবে, আইনে সেই সুযোগ রয়েছে।”
প্রসঙ্গত, গত ২৭ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন বাংলায় এসআইআর (SIR) ঘোষণা করে। তারপর থেকেই চলছে সংশোধনাগার থেকে গ্রাম-শহর সর্বত্র আলোচনার ঝড়। রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে দোষারোপ, পাল্টা মন্তব্য, প্রশ্নবাণ। এই আবহেই এসআইআর নিয়ে মামলা দায়ের হয়। বর্তমানে সেই মামলার শুনানি চলছে কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পালের ডিভিশন বেঞ্চে।

আরও পড়ুনঃ কাঁটাতার বিহীন সীমান্ত! পাচার-অনুপ্রবেশ বাড়লেও কেন নিরব রাজ্য? রিপোর্ট তলব হাই কোর্টের
এরই মধ্যে বন্দিদের নাম এসআইআরের (SIR) তালিকায় রাখা হবে কি না, তা নিয়েই জেল-পরিমণ্ডলে বাড়ছে জল্পনা। কারা দপ্তর যদিও আশ্বাস দিচ্ছে, আইন মেনেই বন্দিদের সই-সাবুদ করা হবে, কোনও অধিকার খর্ব করা হবে না। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কোনও স্পষ্ট নির্দেশ না থাকায় জল্পনা আরও ঘনীভূত হচ্ছে সংশোধনাগার চত্বরে।












