শাহজাহানের হাতে খুন বাবা! বাংলা হান্টের মুখোমুখি হয়ে বাবার লড়াইয়ের কাহিনী শোনালেন সন্দেশখালির প্রীতম

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ২০২৪ উচ্চমাধ্যমিকের তাকলাগানো ফলাফল করে সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন প্রীতম মণ্ডল (Pritam Mondal)। যদিও এর নেপথ্যে ছিল আরও একটি কারণ। অভিযোগ, সন্দেশখালির (Sandeshkhali) ‘বাঘ’ শেখ শাহজাহান (Sheikh Shahjahan) এবং তাঁর বাহিনীর হাতে খুন হতে হয়েছিল প্রীতমের বাবা প্রদীপ মণ্ডলকে। বর্তমানে শাহজাহান জেলবন্দি হলেও, প্রীতমরা আর সন্দেশখালিমুখো হননি। সম্প্রতি তিনিই বাংলা হান্টের (Bangla Hunt) সাম্প্রতিক কনক্লেভে বাবা প্রদীপ মণ্ডলের লড়াইয়ের অজানা কাহিনী তুলে ধরেন।

প্রথমেই প্রীতম বলেন, তাঁর কোনও রাজনৈতিক নেই। তবে তাঁর একটি বিশেষ পরিচয় রয়েছে। তিনি সন্দেশখালির ছেলে। চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে চতুর্দশ স্থানাধিকারী প্রীতম বলেন, এই র‍্যাঙ্ক বিশেষ কিছুই নয়। তাঁর মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী এই র‍্যাঙ্ক করেছেন। তবে তাঁর একটা ‘ফ্যাসিনেটিং’ ইতিহাস রয়েছে।

এরপরেই নিজের বাবার লড়াই নিয়ে মুখ খোলেন প্রীতম। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা জীবনের প্রথম ১০ বছর RSS করেছেন, পরের ১০ বছর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ করেছেন এবং পরের ৪ বছর ভারতীয় জনতা পার্টি করেছেন’। প্রীতম জানান, ২০১৯ সালে তিনি নিজের পরিবারের সন্দে সন্দেশখালিতেই থাকতেন। দুনিয়া সম্বন্ধে তাঁর তখন বিশেষ ধারণা ছিল না, বিশেষ কোনও চাওয়া-পাওয়াও ছিল না। বাবা নিজের রাজনীতির কাজ নিয়ে, মা নিজের গৃহস্থের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। আর আমি ডুবে থাকতাম আমার পড়াশোনার জগতে। তবে উনিশের লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পরেই বদলে যায় মণ্ডল পরিবারের সম্পূর্ণ জীবন।

আরও পড়ুনঃ বড় খবর! তৃণমূল বিধায়ক অদিতি মুন্সীর স্বামীকে CBI তলব, আজই বড় কিছু ঘটতে চলেছে?

প্রীতম বলেন, ‘২০১৯ লোকসভা ভোট শেষ হয়েছে … আমাদের মণ্ডল থেকে বিজেপি লিড পেয়েছে, আমার বাবা এসসি মোর্চার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এরপর থেকে অনেকদিন ধরেই হুমকি আসছিল যে তোমার ব্যবস্থা করব, তোমার সঙ্গে দেখা যাবে। যা হবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে মিটিয়ে নিয়ে গেলেই হল, এটা ভেবে আমরা সবকিছু উপেক্ষা করে চাপের মধ্যে বেঁচে যাই। আমি তখন ছোট ছিলাম, রাজনীতি সম্বন্ধে বুঝতাম না। নিজের পড়াশোনা করতাম, নিজের জগত নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। হঠাৎ করে জামাইষষ্ঠীর দিন বাবার কাছে ডাক আসলো যে বাড়িতে এসো। আমরা সবাই মামার বাড়িতে ছিলাম। বাবা চলে আসে। এরপরেই জানতে পারি গণ্ডগোল হচ্ছে’।

প্রীতম বলে চলেন, ‘এরপর বাবার কাছ থেকে আমার কাছে ফোন আসতে থাকে। বাবা বলে, আমায় শাহজাহান শেখের বাহিনীরা সবাই ঘিরে নিয়েছে। হয়তো আজকে আমি আর ফিরব না। মা, ভাইবোন আর আমার সংগঠনের ছেলেদের খেয়াল রাখিস। ওঁরা তোকে বাঁচিয়ে রাখবে’। সেদিনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে প্রীতম বলেন, ‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমার বাবার সম্বন্ধে অনেক মন্তব্য করেছিলেন যে নিজেরা নিজেরা গুলি করেছে, নিজেরা নিজেরা মারা গিয়েছে। শাহজাহান শেখ তো ওখানে ছিলই না। কেউ কিছুই করেনি ওখানে। আর ওখানকার যুব সম্প্রদায় মানে ওঁরা মদ খায় আর রাজনীতি করে, এর বেশি ওদের কোনও যোগ্যতাই নেই। সেদিন বুকে লেগেছিল যে এর উত্তরটা একদিন জায়গা মতো দেব‘।

Sandeshkhali Pritam Mondal

এরপর যুব সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ কী? তা জানতে চান প্রীতম। তিনি বলেন, ‘আমাদের যুব সম্প্রদায়ের কী হবে? সন্দেশখালির ছেলেগুলো হয়তো মাধ্যমিক পাশ করবে, এরপর হয় নিজেকে রাজনীতির রঙে রাঙাবে, আর যদি ভালো থাকতে চাও, তাহলে চলে যেতে হবে তামিলনাড়ুর কোনও কলে। আমি জানতে চাই এদের ভবিষ্যৎ কী? শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে দাদা-দিদিরা বসে আছেন, পরবর্তী প্রজন্ম আমরা কি শিখব যে আমাদের দাদা-দিদিরা রাস্তায় বসে আছেন, আমাদের ভবিষ্যৎও তাই! আর কি আমাদের ভাই-বোনের উঠে আসবে? আমি তাঁদের জন্য লক্ষ্য ঠিক করতে চাই’।

Sneha Paul
Sneha Paul

স্নেহা পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াকালীন সাংবাদিকতা শুরু। বিগত ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত। রাজনীতি থেকে বিনোদন, ভাইরাল থেকে ভ্রমণ, সব ধরণের লেখাতেই সমান সাবলীল।

সম্পর্কিত খবর