‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল!’, ভরা এজলাসে হঠাৎ কেন এমন বললেন বিচারপতি সিনহা?

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বৃহস্পতিবার নবান্ন অভিযানের আহ্বায়ক সায়ন লাহিড়ীকে (Sayan Lahiri) গ্রেফতার করে পুলিশ। এই গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court)। শুক্রবার এই মামলার শুনানিতে ছাত্রনেতা সায়নকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা (Justice Amrita Sinha)। শনিবার দুপুর ২টোর মধ্যে তাকে ছেড়ে দিতে হবে বলে নির্দেশ দেন তিনি।

হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, শুধু এই মামলায় নয়, অন্য কোনো মামলাতেও আদালতের নির্দেশ ছাড়া সায়নের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপও করতে পারবে না পুলিশ। প্রসঙ্গত আর জি কর (RG Kar) কাণ্ডের প্রতিবাদে গত ২৭ অগস্ট বার নবান্ন অভিযানের ডাক দেয় ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’। সেই অভিযান ঘিরে দফায় দফায় পুলিশ-বিক্ষোভকারীদের খণ্ডযুদ্ধ বাধে। দু’পক্ষেরই বেশ কিছুজন গুরুতর আহত হন।

   

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এই প্রতিবাদ মিছিলের আহ্বায়ক সায়ন লাহিড়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নবান্ন অভিযানে পুলিশি অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও মিছিল, জমায়েত করা হয়েছে। যার জেরে অশান্তির সৃষ্টি হয়। এই যুক্তিতেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার মামলার শুনানিতে রাজ্যকে হাইকোর্টের প্রশ্ন, আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে কেন এখনও গ্রেফতার করা হয়নি? আরজি কর ঘটনার প্রতিবাদেই ওই কর্মসূচি। ফলে গোটা ঘটনায় প্রাক্তন অধ্যক্ষ কখনই দায় এড়াতে পারেন না। এখনও পর্যন্ত তাকে কী হেফাজতে নিয়ে কোনোরকম জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ? প্রশ্ন তোলেন জাস্টিস সিনহা।

রাজ্যের যুক্তি, ওই ছাত্রনেতা নবান্ন অভিযানের ডাক দেন। পুলিশের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও ওই কর্মসূচী করা হয়। দিকে দিকে অশান্তির ঘটনা ঘটে। প্রমাণ হিসেবে ঘটনার দিনের বেশ কিছু ছবি আদালতে দেখান রাজ্যের আইনজীবী। এরপরই বিচারপতির পাল্টা প্রশ্ন, এই সায়ন লাহিড়ী কী কোন রাজনৈতিক দলের নেতা? রাজ্যের উত্তর, তিনি ছাত্রনেতা। হাইকোর্টের বক্তব্য, কীসের ভিত্তিতে ওই ছাত্রনেতাকে কী ভাবে এত প্রভাবশালী বলা হচ্ছে?

বিচারপতির প্রশ্ন, ছাত্রনেতা হয়ে কী তিনি এতটাই জনপ্রিয় যে তার ডাকে হাজার হাজার লোক এভাবে জড়ো হয়ে গেল? তার কী অতীত? সায়ন কি কখনও সক্রিয় রাজনীতিতে গেছেন? তিনি রাজনীতি করেন? না কি সবটাই গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল! রাজ্য জানায়, ওই নবান্ন অভিযান নিয়ে সায়ন প্ররোচনামূলক বক্তব্য রেখেছিলেন।

Calcutta High Court

আরও পড়ুন: এই প্রথম আরজি কর-কাণ্ডে এক মহিলাকে জেরা! কে ইনি? পরিচয় জানলে চমকে উঠবেন

বিচারপতির পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এই ঘটনা নিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতাও তো প্ররোচনামূলক ভাষণ দেন। তাদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কী পদক্ষেপ করা হয়েছে? পাশাপাশি ওই ছাত্রনেতা যে সরাসরি নবান্ন অভিযানের অশান্তিতে জড়িত, এমন কোনও তথ্য নেই।’’ তাহলে এক্ষেত্রে কী তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে? প্রশ্ন তোলে আদালত।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, আরজি করের ঘটনায় গোটা রাজ্যের মানুষ মর্মাহত। না ওই ছাত্রনেতা প্রভাবশালী, না তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। এর আগেও তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। তাই অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই মামলায় হলফনামা জমা দেবে রাজ্য।

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর