বাংলা হান্ট ডেস্কঃ তৃণমূল (Trinamool Congress) জমানায় বেআইনিভাবে জলাভূমি ভরাট করে নির্মাণের অভিযোগ হামেশাই উঠে এসেছে। বেআইনিভাবে জলাভূমি ভরাট রুখতে আগেই কড়া নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। গত বছর জলাভূমি ভরাট নিয়ে কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্যের মৎস্য দফতরও। তবে আদৌ কোনো সুরাহা কি হচ্ছে? উল্টে বারে বারে অভিযোগের তীর গিয়েছে শাসকদলের দিকে। এবারে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২০০০ বিঘা জমি বেআইনিভাবে ভাগ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল। শুধু জমি নয় একেবারে জমা জমি বুজিয়ে সেই জমির প্লটিং (Illegal Plotting) হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
কলকাতার তাড়দহে প্রোমোটার গৌতম মণ্ডলের স্নেহের পরশ ডেভেলপার প্রাইভেট লিমিটেড নামের এক সংস্থার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা (Shankudeb Panda)। অভিযোগ, কলকাতার বুকে জলা বুজিয়ে চারিদিকে পাঁচিল ঘিরে বিঘার পর বিঘা জমি ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে। আর এর পেছনে মদত রয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের।
বাংলা হান্টকে দেওয়া সাক্ষাতকারে এই বিষয়ে শঙ্কুদেব পণ্ডা বলেন, ‘জমি মাফিয়ারা সরকারি জমি, গরিব মানুষের জমি গায়ের জোরে, বন্দুকের নল ঠেকিয়ে অল্প পয়সায় লুটে নিচ্ছে। এভাবেই প্রায় ২০০০ বিঘার প্রজেক্ট করা হয়েছে। বেআইনিভাবে এসব হচ্ছে। যার পেছনে সরাসরি তৃণমূলের নেতাদের মদত রয়েছে। নাহলে সরকার তো এসব বন্ধ করে দিত। এগুলো সব হচ্ছে এক্সটেন্ডেড ’গুলশান কলোনি’! বাংলাদেশি, রোহিঙ্গাদের ঢোকাচ্ছে। এভাবে কলকাতা সহ গোটা বাংলার সর্বনাশ করছে। অবিলম্বে এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে চলেছে। যত দ্রুত সম্ভব এই বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। ‘
“অবিলম্বে এই গৌতমকে গ্রেফতার করা উচিৎ।” বলেও দাবি তোলেন শঙ্কুদেব পণ্ডা। এদিকে এই জমি মাফিয়াদের সূত্র ধরেই তার কথায় আগে উঠে আসে তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের প্রসঙ্গ। জমির বিবাদের কারণেই কি সুশান্ত ঘোষকে খুন করার ছক কষা হয়েছিল? এই নিয়ে চলছে তদন্ত। এরই মধ্যে তাড়দহের এই ঘটনার সঙ্গে সুশান্ত প্রসঙ্গ জুড়েছেন শঙ্কুদেব পণ্ডা।
সম্প্রতি এক ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাতকারে বিজেপি নেতা বলেন, ‘বিঘার পর বিঘা ঝিল বুজিয়ে চারিদিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরাও করা হচ্ছে। এদিকে নাকি রাজ্যে শিল্প করার জন্য জমি নেই। ২০০০ বিঘা জমির বেআইনিভাবে ভাগ হচ্ছে। ’গুলশান কলোনি’ তৈরী হচ্ছে। এর ভাগ নিয়েই যত গন্ডগোল। আসল জিনিস হচ্ছে জমির টাকা। বলছে জুলকারকে (মহম্মদ জুলকার নাইন আলি) আমি চিনি না। তাহলে এই ছবিতে কে দাঁড়িয়ে আছে। আপনার সাথে দেখা যাচ্ছে এ জুলকার নয়?’ ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন করেন শঙ্কুদেব।
এখানেই শেষ নয়! শঙ্কুদেব আরও বলেন,’ জুলকার হায়দার এরা কে? এরা সব জমি মাফিয়ার এজেন্ট স্নেহের পরশের প্রোমোটার গৌতম মণ্ডল। ওখানে অফিস বানিয়ে ফেলেছে। কেন গ্রেফতার করা হবেনা একে? সুশান্ত ঘোষকে কেন আতঙ্কে থাকতে হবে? এর নেপথ্যে জমি মাফিয়া। বেআইনিভাবে জমি দখল সেখান থেকে টাকা আছে। তার উপর অবৈধ নির্মাণ সেখান থেকেও টাকা আসছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে আসা রোহিঙ্গাদের কাছে সেসব বিক্রি হচ্ছে।’ যদিও এই বিষয়ে একাধিকবার সুশান্ত ঘোষের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও লাভ হয়নি। বারংবার তিনি ফোন কেটে দিয়েছেন।
এদিকে সম্প্রতি এই একই ইস্যু নিয়ে আওয়াজ তুলেছেন বিজেপি নেতা রূদ্রনীল ঘোষও (Rudranil Ghosh)। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই বিঘা হাজার জমির বদলে কটাক্ষ করে দুই হাজার বিঘা জমি দিয়ে সমাজমাধ্যমে রুদ্রনীল লিখেছেন,
মমতা জমি- সিন্ডিকেট।। জনগন “উপেন”। (ভূমি-ভূমি সংস্কার-ভূমি ব্যাবহার-ভূমি রাজস্ব মন্ত্রী, পুলিশমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী।)
আরও পড়ুন: অপেক্ষার অবসান! শুক্রবার থেকেই অ্যাকাউন্টে ঢুকবে এই প্রকল্পের টাকা! বড় ঘোষণা মমতার
“বাবু কহিলেন বিদায় বেলায়, সব জমি দেব ঝাড়ি, রোহিঙ্গা আর প্রোমোটার দিয়া চাল চুলা নিব কাড়ি। ও বোকা উপেন খাও হে নজেন, তৈরি ববি-সুশান্ত, “স্নেহের পরশ” ছড়াবে ওরা, জনতা অবলাকান্ত।।”
শুক্রবারই নিজের ফেসবুক থেকে রুদ্রনীল লিখেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী রোহিঙ্গা-বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ এবং জমি দূর্নীতি চেপে গেলেন।’ সম্প্রতি এক ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে এই স্নেহের পরশের প্রসঙ্গ তুলে গেরুয়া নেতা বলেন, ‘নরেন্দ্রপুর থানার অধীনে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে ২০০০ বিঘা সরকারি জমি, সাধারণ জনগণের জমি পাঁচিল ঘেরা হয়ে গেছে। কিভাবে সম্ভব? ফিরহাদ হাকিম উত্তর দিন।’ এই জমির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রূদ্রনীল। তিনি আরও বলেন, ‘এর সঙ্গে একজন ভাঙড়ের নেতা যুক্ত আছেন। প্রমাণও আছে।’ কিভাবে এই জমির মিউটেশন হচ্ছে? প্রশ্ন রূদ্রনীলের।
প্রসঙ্গত, বিজেপি তরফে এর আগেও বহুবার অভিযোগ উঠেছে, বাংলার বুকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে আসা রোহিঙ্গাদের জায়গা করে দিতে অবৈধভাবে জমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তৃণমূলের বেআইনি অবৈধ ভোট ব্যাঙ্ক ভরাতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীতে ভরে যাচ্ছে বাংলার গ্রাম ও শহর। এবারেও সেই একই অভিযোগ উঠে এল।