বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: ডার্বিতে হারের যন্ত্রণা কাটিয়েও আজ ভালো ফুটবলের প্রত্যাশায় টিভিতে চোখ রেখেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা। কিন্তু আরও একবার হতাশাই সঙ্গী হল লাল হলুদ ভক্তদের। ম্যাচের একটা বড় সময় পরিকল্পনাহীন ফুটবল, সুযোগ নষ্টের ফুলঝুরি, প্রতিপক্ষকে বাগে পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও সেই সুযোগ নিজেদের ভুলে হাতছাড়া করা, সবমিলিয়ে ইস্টবেঙ্গল রয়েছে সেই গত দুই বছরের পুরনো ইস্টবেঙ্গলেই।
ডার্বিতে গোলরক্ষকের ভুলে হারতে হলেও ইস্টবেঙ্গল বেশ কিছুটা লড়াই করেছিল। কিছু রেফারির সিদ্ধান্ত নিজেদের পক্ষে পেলে তাদের দলই জিতে মাঠ ছাড়তো এমন দাবিও করেছিলেন বেশ কিছু সমর্থক। যদিও সেই সব দাবির খুব বেশি গুরুত্ব নেই কারণ এটিকে মোহনবাগান আইএসএল শুরু হওয়ার আগে কিছুটা অফ ফর্মে থাকলেও তারা অনেক আগে থেকে সঙ্ঘবদ্ধ একটা ইউনিট। তাদের বিরুদ্ধে হারটা অনেক বাস্তববাদী ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছে প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু আজ চেন্নাইয়ান এফসি-র বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা মাঠে যা করলেন তারপর অনেক আশাবাদী সমর্থকরাও আর ভরসা করতে পারছেন না এই দলের ওপর।
প্রথমার্ধে বলের দখল রাখার ক্ষেত্রে চেন্নাইয়ান এফসি বেশ কিছুটা এগিয়েছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রতিআক্রমণে বেশ কয়েকবার দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণভাগের ফুটবলাররা। কিন্তু দুইবার বিপক্ষ দলের গোলরক্ষক দেবজিৎ মজুমদারকে একা পেয়েও তেকাঠির মধ্যে বল রাখতে পারেননি ভিপি সুহের এবং ক্লিয়েটন সিলভা। একবার অতিরিক্ত স্বার্থশূন্য হতে গিয়ে দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ মিস করেন ডোহার্টিও।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে ইস্টবেঙ্গল আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ায়। হিমাংশু ঝাংরা পরিবর্ত হিসাবে মাঠে আসার পর থেকেই নজর কাড়তে শুরু করেন। কিন্তু প্রথমার্ধের সুযোগ গুলোর মত ক্লিয়ার কাট সুযোগ তৈরি হয়নি। উল্টে ৬৯ মিনিটে চেন্নাইয়ানের দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার ভাফা কর্নার থেকে আসা বল থেকে গোল করে দিয়ে উপস্থিত লাল হলুদ ভক্তদের চুপ করিয়ে দেন।
কিন্তু গোল পাওয়ার উত্তেজনায় তিনি হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন যে ইতিমধ্যেই তিনি একটি হলুদ কার্ড দেখে রেখেছেন। জার্সি খুলে একটি মন ছুয়ে যাওয়া বার্তা দিতে গিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়। ১০ জনের চেন্নাইয়ানকে চেপে ধরার সুযোগ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই অনিরুদ্ধ থাপ্পাকে কনুই মেরে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ইস্টবেঙ্গল সাইড ব্যাক সার্থক গুলোই। পর এলিয়ান্দ্রো, মোবাশির, অনিকেত যাদবদের মাঠে নামিয়ে মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ স্টিফেন কনস্ট্যান্টটাইন। কিন্তু গোল পাওয়া তো দূরের কথা, চেন্নাইয়ান এফসি ডিফেন্সের ওপর ঠিকঠাক চাপ তৈরি করতেও ব্যর্থ হয় ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ ভাগের ফুটবলাররা।
ঘরের মাঠে ১-০ ফলে হেরে লিগ টেবিলের ১০ নম্বরে নেমে গেল ইস্টবেঙ্গল। তাদের থেকে পিছিয়ে রয়েছে শুধুমাত্র নর্থইস্ট ইউনাইটেড। ম্যাচ খেলে মাত্র একটিতে জিতে এবং চারটি ম্যাচ হেরে ধুঁকছে লাল হলুদ বাহিনী। পরের ম্যাচ বেঙ্গালুরু এফসির ঘরের মাঠে। সেই ম্যাচ থেকে কোনরকম প্রত্যাশা রাখছেন না ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। বুদ্ধিমান সমর্থকরা এটাও বুঝে গেছেন যে প্রতিবছর ইনভেস্টার বনাম সাবেক কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব লেগে থাকে দল যদি প্রতিবছর পরিবর্তন হয় তাহলে এর চেয়ে বেশি কিছু পাওয়ার নেই তাদের। ইস্টবেঙ্গলের সুদিন কবে ফিরবে সেই প্রশ্নের জবাব এখন হয়তো ভগবানের পক্ষেও দেওয়া সম্ভব নয়।