“ত্যাগই মুক্তির পথ”, সন্ন্যাস নিয়ে গেরুয়া বসনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিলেন রায়গঞ্জের অধ্যাপিকা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: একদম ছোট থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ নিয়মিতভাবে পাঠ করতেন তিনি। একটা সময়ে তা রীতিমতো নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পাশাপাশি, স্বামী বিবেকানন্দের বাণীতেও প্রবলভাবে আকৃষ্ট হতেন। আর সেখান থেকেই আধ্যাত্মিক সাধনার লক্ষ্যে নিতে শুরু করেছিলেন প্রস্তুতি। শেষ পর্যন্ত “ত্যাগই মুক্তির একমাত্র পথ” এই আপ্তবাক্যকে পাথেয় করে সন্ন্যাসিনী হয়েছেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের (Raiganj University) ভূগোলের অধ্যাপিকা ডঃ রুমকি সরকার।

জানা গিয়েছে, কর্মরত অবস্থাতেই পুরোপুরি সন্ন্যাস জীবনকে বেছে নিয়েছেন ওই অধ্যাপিকা। পাশাপাশি, বুধবার সন্ন্যাস জীবনে প্রবেশের পর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখেন তিনি। এমনকি, ক্লাসও নেন অধ্যাপিকা। এমতাবস্থায়, তাঁকে নতুন রূপে দেখে খুশি পড়ুয়ারাও। জানা গিয়েছে, ৩৮ বছরের অবিবাহিতা রুমকিদেবীর বাড়ি বর্ধমানে। ছাত্রাবস্থাটি ওই জেলাতে কাটিয়েই তিনি খড়গপুর আইআইটিতে গবেষণার কাজ সেরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শেষ করেন।

পাশাপাশি, স্কুল শিক্ষিকা হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করলেও ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপিকা পদে যোগ দেন তিনি। তাঁর বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা ও এক দিদি রয়েছেন। যদিও, দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে কলকাতায়। এমতাবস্থায়, রুমকী দেবী সাংসারিক জীবন ত্যাগ করলেও অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে, গেরুয়া বসন পরিহিতা অবস্থায় তাঁকে ক্লাসে দেখে খুশি হয়েছেন পড়ুয়ারা। পাশাপাশি, সন্ন্যাসীর বেশে রুমকিদেবীর পাঠদান তাঁদের খুবই ভালো লেগেছে বলেও জানা গিয়েছে। এছাড়াও, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দুর্লভ সরকার জানিয়েছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে কারোর পোশাক পরিচ্ছদ এবং ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।”

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, বহুদিন ধরেই আধ্যাত্মিক চর্চার সাথে যুক্ত রয়েছেন রুমকিদেবী। পাশাপাশি, মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে ২০ কিমি দূরে অবস্থিত ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দির থেকে সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। সন্ন্যাস যোগের জন্য তিনি দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিলেন। রুমকিদেবী জানিয়েছেন, “আমি সন্ন্যাসের নিয়ম মেনেই সন্ন্যাসী হয়েছি। তবে, সংসারের জীবন ত্যাগ করলেও কর্মজীবনে থাকবো। এই জীবনে আসা হঠাৎ নয়। আমি অনেকদিন ধরে এর মধ্যে ছিলাম। ব্রহ্মচর্য ছাড়া এই জীবনে আসা যায় না। যাঁরা আমাকে কাছ থেকে দেখেছেন তাঁরা জানেন।”

822e482d 1a95 40ad 9edd 613b99fa70d3 1666614546758 1666614561238 1666614561238

তাঁর মতে, “কর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম”। পাশাপাশি, অন্যের কর্মে জীবন চালানোর প্রথাকে তিনি আদৌ বিশ্বাস করেন না। এমতাবস্থায়, নব প্রজন্মকে পাঠ দানের মাধ্যমে জীবনের প্রকৃত শিক্ষা দেওয়াই তাঁর মূল কর্ম বলে মনে করেন তিনি। এছাড়াও, জীবনের এই নতুন অধ্যায় শুরু করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন রুমকিদেবী।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর