বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কৃষক পরিবারে জন্ম তার, করে খেতে কখনও মুদি দোকানে কাজ, কখনও গ্রিলের দোকানে, কখনও বা মাছের ব্যবসা। ছেলেবেলা থেকেই সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়েই জীবন কেটেছে বীরভূম তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal)। লেখাপড়া বলতে ওই এইট পাশ। সেই পাঠ চুকেছে বহুদিন। তারপর থেকে কখনও আর তেমন ভাবে খাতা কলম ধরতে হয়নি কেষ্টকে। তবে এবার ইডির (ED) জিম্মায় ফের নাকি পেন চালাতে হবে ‘বীরভূমের বাঘ’কে। এই নিয়েই ঘোর বিপাকে কেষ্ট মণ্ডল।
সূত্রের খবর শুধুই যে কলম ধরতে হবে অনুব্রতকে, এমনটা নয়, লিখতে হবে নিজের বয়ানও! কস্মিনকালে লেখাপড়া ছাড়া অনুব্রত এই নিয়েই বিশাল ফ্যাসাদে। তাকে দিয়ে বয়ান লেখাতে গিয়ে বিপাকে তদন্তকারী আধিকারিকরাও। ইডি সূত্রে খবর, শেষমেষ লিখতে না পারায় লেখা বয়ানের শেষে শুধুমাত্র নিজের সইটুকু করেছেন অনুব্রত।
ঠিক কী ঘটেছিল? ৫০ পিএমএলএ অ্যাক্ট এর নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দিনে অভিযুক্ত অনুব্রতকে যখন অফিসারের সামনে নিজের বয়ান লিখে দেওয়া হয় সেই সময় অবাক নয়নে চেয়ে থাকেন অনুব্রত। এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছুটা নিচু স্বরে ভোলাভালা কেষ্ট বলেন, “আমি লিখতে পারি না স্যর। শুধু নাম সই করতে পারি।” কেষ্টর মুখে এই কথা শুনতেই ফ্যাসাদে পড়েন ইডি অফিসাররা।
এরপরই জটিল সমস্যার সমাধান করতে ইডি আধিকারিকদের মধ্যে শুরু হয় জরুরি ভিত্তিক আলোচনা। বৈঠক শেষে এক সিনিয়র অফিসারের নির্দেশে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর মেনে জেরা পর্বে একজন নিরপেক্ষ সাক্ষীকে নিয়ে আসা হয় অনুব্রতর দেওয়া উত্তর লেখার জন্য। গোটা জেরা প্রক্রিয়ার শেষে অভিযুক্ত কেষ্টকে তার নিজের দেওয়া উত্তর পড়ে শোনানো হয়। সব তথ্য ঠিক আছে বলে জানালে সেই কাগজের নীচে সই করেন অনুব্রত।
প্রসঙ্গত, নিয়ম মতো ৫০ পিএমএলএ অ্যাক্ট অনুযায়ী ইডি-র বয়ান রেকর্ড করা হয়। আইন অনুযায়ী অফিসারের সামনে অভিযুক্ত কিংবা সাক্ষীকে নিজেকেই নিজের বয়ান লিখে দিতে হয়। তদন্তকারীরা অফিসারদের করা প্রশ্নের উত্তর অভিযুক্তকে লিখতে হয়। গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিও রেকর্ডও করা হয়।
সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী, অভিযুক্ত বা সাক্ষী ইডির কাছে যে বয়ান দেয় আদালতেও তা গ্রহণযোগ্য, বিচারকের সামনে দেওয়া জবানবন্দির সমান। নিজের দেওয়া বয়ান অভিযুক্ত বা সাক্ষীকে দিয়ে জোর করে বা ভয় দেখিয়ে লেখানো বলে পরবর্তীতে আদালতে দাবি করতে না পারে সেজন্য আইনের মাধ্যমে ইডিকে এই বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া আছে। অনুব্রত মণ্ডল যেহেতু রাজনৈতিক নেতা এবং পরে যাতে কোনোভাবে তিনি তার কথা পরিবর্তন করতে না পারে সেজন্য তাকে দিয়েই বয়ান লেখাতে চেয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। তবে লিখতে না জানায় নিরপেক্ষ সাক্ষীকে দিয়ে তার বয়ান লেখানো হয়।