বাংলা হান্ট ডেস্ক : কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার পরেই বাংলা বিনোদন জগতে নেমে এসেছে এক বিরাট শোকের ছায়া। প্রয়াত হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা দেবরাজ রায় (Debraj Roy)। সম্পর্কে তিনি বাংলা সিনেমার লক্ষীমান্ত অভিনেত্রী অনুরাধা রায়ের স্বামী। কাজের জন্যই আজীবন নিঃসন্তান থেকে গিয়েছেন এই দম্পতি। কিন্তু এবার স্বামী চলে যাওয়ার পর পুরোপুরি নিঃসঙ্গ জীবন অভিনেত্রী অনুরাধা রায়ের।
বহুদিন ধরেই অসুস্থ দেবরাজ রায় (Debraj Roy)
২০১৭ সালে সেরিব্রাল অ্যাটাক হওয়ার পর থেকেই অসুস্থ দেবরাজের (Debraj Roy)। ঘরবন্দি অভিনেতার (Debraj Roy) দিন কাটত হুইলচেয়ারে বসেই। কিন্তু অসুস্থ শরীরেও ঘরবন্দি না থেকে ঘুরে বেড়াতে চাইতেন অভিনেতা (Debraj Roy)। আর স্বামীকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে বড় বড় ট্রিপ করেছেন অনুরাধা। ঘুরতে গিয়েছিলেন সিমলা, কুল্লু, মানালি,অমৃতসর, গোল্ডেন টেম্পল, চণ্ডীগড়-এর মতো একাধিক জায়গায়।
শুধু তাই শরীর খারাপ হওয়ার পরেও অভিনেতার (Debraj Roy) স্পিরিট কমেনি একফোঁটা। তবে পুজোটা হাসপাতাল বাড়ি করেই কাটে তাঁদের। অনুরাধাদেবী জানিয়েছেন গত দুমাসে ৫ বার হাসপাতাল আর বাড়ি করেই কেটেছে তাঁদের। কিন্তু এদিন আর শেষ রক্ষা হল না। মৃত্যুকালে দেবরাজ রায়ের বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। কিন্তুন এবার নিঃসন্তান অনুরাধা রায় কিভাবে কাটাবেন তাঁর বাকি জীবন?
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অকপট স্ত্রী অনুরাধা রায় (Anuradha Roy)
এই প্রশ্নই এখন উঁকি দিচ্ছে কৌতুহলী অনুরাগীদের মনে। সন্তান না নেওয়া থেকে শুরু করে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের নানান অজানা কাহিনী সম্প্রতি ‘এইসময় অনলাইন’-এর সাথে ভাগ করে নিয়েছিলেন অভিনেত্রী। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী দেবরাজ রায় বাংলার রঙ্গমঞ্চ ছোট-বড় দুই পর্দার পাশাপাশি শ্রুতি নাটক কিংবা সংবাদ পাঠক হিসাবে নিজস্ব পরিচিতি তৈরী করেছিলেন।
আরও পড়ুন : চিরঘুমে সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র টুনু! স্বামী হারা অভিনেত্রী অনুরাধা রায়
১৯৭০ সালে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ সিনেমার হাত ধরে অভিনয় জগতে হাতেখড়ি হয়েছিল দেবরাজ রায়ের। পরবর্তীতে তিনি কাজ করেছেন বেশ কিছু খ্যাতনামা পরিচালকদের সাথে। তালিকায় রয়েছেন মৃণাল সেন, তরুণ মজুমদার, তপন সিনহার মতো গুণী পরিচালকদের সাথে। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের মাধ্যমে এত নামিদামি মানুষদের সাথে কাজ করা সত্ত্বেও অভিনয় জীবনে সেভাবে দাম পেলেন না অভিনেতা।
কদর পেলেন না দেবরাজ রায় (Debraj Roy)
এই নিয়েই এদিন আফসোসের সুরে স্ত্রী অনুরাধা রায় বললেন, ‘আমার এখানেই খারাপ লাগে যে, ওঁর মতো একজন গুণী মানুষ, এতগুলো মাধ্যমে কাজ করেও সেই জায়গা পেলেন না। তার মধ্যে দেবরাজ ছিলেন মুখচোরা। নিজেকে মেলে ধরতে পারতেন না। ওটা আমাদের সময়ের মানুষদের আসেও না। লুকিয়ে থাকতেই আমরা পছন্দ করি। আমরা প্রাচীনপন্থী।’
দেবরাজ রায়ের সাথে অনুরাধা দেবীর বিয়ে হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। ৪৮ বছরের সংসার জীবন তাঁদের। অনুরাধা দেবীর কথায়, ‘ওঁর চলে যাওয়ার সময় বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। একেবারেই চলে যাওয়ার সময় নয়। এতখানি অসুস্থ না হলে আমাদের এই বাঁধন ছিন্ন হত না।’ সল্টলেকের বাড়িতে এখন একা তিনি। এতদিন সংসারে ছিলেন তিনি আর তাঁর স্বামী। কোনও সন্তান নেই তাঁদের।
আরও পড়ুন : সত্যজিৎ রায়ের ‘টুনু’ দেবরাজ প্রতিভা থাকলেও পাননি পরিচিতি! বিদায়বেলায় আক্ষেপ স্ত্রী অনুরাধা রায়ের
নিঃসন্তান দম্পতি
অভিনেত্রীর কথায়, ‘সারাজীবন একে-অপরকে আগলে ধরে থাকার চেষ্টাই করেছিলাম। দেবরাজ চলে গিয়েছে। এখন এই বাকি জীবনটায় আমি একা। আমরা কেন সন্তান নিলাম না, অনেকেই এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইতে পারেন। প্রথমেই বলি, এই প্রশ্নটা আমাকে কষ্ট দেয় না। ফলে এটা নিয়ে কথা বলতে আমার কোনও আড়ষ্টতা নেই। আমার বিয়ের পর থেকেই থিয়েটার-শো নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তখন একবারের জন্যে মনেই হয়নি যে নিজের সন্তানের প্রয়োজন আছে। সন্তান নেওয়ার অবকাশ ছিল না আসলে। পরবর্তীতেও মনে হয়নি, সন্তান নেই বলে জীবনটা অসম্পূর্ণ। থিয়েটারের জন্যেই আমাদের জীবন নিবেদিত ছিল।’
কিভাবে জীবন কাটাবেন অনুরাধা রায়?
কিন্তু এখন কিভাবে জীবন কাটাবেন তিনি? এপ্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেছেন, ‘কোনও কিছু ভাবার সময় পাইনি। দেখতে হবে কী করা যায়।’ তবে ভবিষ্যতেও কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন অনুরাধা দেবী।