বাংলাহান্ট ডেস্কঃ সারা দেশজুড়ে করোনার (Corona virus) প্রভাবে চলছে লকডাউন। আর এই মারণ ভাইরাস করোনার জেরে দূরত্ব বাড়িয়েছে মানুষের মধ্যে, সেই করোনাই ২০ বছর পর স্ত্রীর কাছে ফিরিয়ে দিল স্বামীকে। সন্তানেরা ফিরে পেল বাবাকে। যে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার প্রত্যেকের কাছে রীতিমতো অপছন্দের জায়গা, সেখান থেকেই প্রায় ধূসর হয়ে যাওয়া সংসারে জ্বলে উঠল ঝলমলে আলো। এই ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী থাকল আসানসোল (Asansol) ।
সাংসারিক কলহের কারণে মনের দুঃখে স্ত্রী ও সন্তানদের রেখে বার্ণপুর শ্যামবাঁধের বাড়ি ছেড়ে দিল্লিতে পাড়ি দিয়েছিলেন সুরেশ প্রসাদ (Suresh Prasad) । সেখানে দিনমজুরের কাজ করে নিজের অন্নসংস্থান করছিলেন তিনি। বছর আটেক আগে দু’বার বাড়িতে চিঠি দিয়ে নিজের বেঁচে থাকার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চিঠিতে নিজের ঠিকানা না দেওয়ায় স্ত্রী উর্মিলা খুঁজে পাননি সুরেশকে। বাধ্য হয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বামীর বাড়ি ফিরে আসার আশা একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি। এভাবেই দিব্যি চলছিল।
চলতি বছরে বিশ্বজুড়ে থাবা বসালো করোনা। কেজরিওয়াল সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের বিভিন্ন স্কুলের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখলেন। সেখানেই ঠাঁই হল সুরেশের। এরপরই পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর জন্য চালু হল বিশেষ ট্রেন। বুধবার রাতে এরকমই একটি ট্রেন থেকে আসানসোলে নামলেন সুরেশ। পাঠানো হল সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। সেখানে নিজের পরিচয়ের প্রমাণপত্র দেখাতে না পারলেও মৌখিকভাবে বাড়ির ঠিকানা বলেছিলেন তিনি। এরপর পুলিশ যোগাযোগ করে সুরেশের পরিবারের সঙ্গে। কুড়ি বছর আগে ভেঙে যাওয়া ঘর ফের নতুন করে জোড়া লাগে।
বৃহস্পতিবার সকালে দেখা হয় স্বামী-স্ত্রীর। স্বামীকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা উর্মিলাদেবী। ছেলে সুধীর প্রসাদ বলেন, “সকালে কাজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলাম। পুলিশ অফিসার এসে বলল, বাবা আসানসোলের সেনরেল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আছে। প্রথমে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারিনি। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে মাকে সেই কথা বলি। মাও হতচকিত হয়ে যান। তারপরই প্রতিবেশীদের নিয়ে হাসপাতালে চলে যাই।”
উর্মিলাদেবী বলেন, “স্বামী বেঁচে আছে এই বিশ্বাস থেকেই সিঁথিতে সিঁদুর নিয়ে আছি। প্রচণ্ড আর্থিক অনটনের মধ্যে সংসার চালিয়ে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি।” সুরেশ প্রসাদ বলেন, “উর্মিলার বয়স হয়েছে। তবে তাঁর বাঁ হাতে উল্কিতে আমার নাম আজও রয়েছে।” জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দপ্তর ও পুলিশ আধিকারিকরা এদিন বলেন, “এমনিতে কোনও সমস্যা নেই। বাড়ির লোকেরা তাঁকে চিনতে পেরেছেন। কিন্তু, লালারসের পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাকে সরকারি কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।” তাই এখনই বাড়ি ফেরা নয়। আপাতত সুরেশের ঠিকানা সেই কোয়ারেন্টাইন সেন্টার।