বাংলা হান্ট ডেস্ক: জগন্নাথ মন্দির (Jagannath Temple) মানেই যে জায়গাটির কথা আমাদের মনে প্রথমে আসে সেটি হল পুরী (Puri)। পুরীর জগন্নাথ মন্দির সমগ্ৰ বিশ্বে বিখ্যাত। তবে, এবার লন্ডনের মাটিতেও তৈরি হতে চলেছে প্রথম জগন্নাথ মন্দির। এদিকে, ইতিমধ্যেই ওই মন্দির তৈরির উদ্দেশ্যে আড়াই কোটি পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ২৫০ কোটি টাকা) দান করার কথা ঘোষণা করেছেন ওড়িশার এক ধনকুবের। আর তারপর থেকেই তিনি উঠে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পাশাপাশি, তাঁর পরিচয় সম্পর্কে জানতেও আগ্রহী হয়েছেন সকলেই।
এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, ওড়িশার ওই ধনকুবেরের নাম হল বিশ্বনাথ পট্টনায়েক। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন অর্থাৎ রবিবার তাঁর এই বিপুল দানের প্রসঙ্গটি সামনে আসে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে বিদেশের মাটিতে জগন্নাথ মন্দির তৈরির কাজে কখনও এত বিপুল অর্থ দান করা হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই এক বিরল নজির তৈরি করেছেন বিশ্বনাথ। পাশাপাশি, সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের কাছে ব্রিটেনের শ্রীজগন্নাথ সোসাইটি জানিয়েছে, রবিবার ব্রিটেনে প্রথম জগন্নাথ সম্মেলনে ওই অর্থদানের ঘোষণা করেন বিশ্বনাথ পট্টনায়েক।
কে এই বিশ্বনাথ পট্টনায়েক: জানা গিয়েছে, স্নাতকস্তরে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন বিশ্বনাথ। পাশাপাশি, তাঁর এলএলবি এবং এমবিএ ডিগ্রিও রয়েছে। ব্যাঙ্কার হিসেবে দীর্ঘ দিন সফলভাবে কাজ করেন বিশ্বনাথ। মূলত, ২০০৯ সালে একজন উদ্যোগপতি হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ওই বছরই চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের সংস্থা গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেন তিনি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থাগুলিতেই কাজ করেছিলেন বিশ্বনাথ। বর্তমানে বিশ্বের একাধিক দেশে বিশ্বনাথের ব্যবসার বিস্তার ঘটেছে। এই প্রসঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে বিশ্বনাথ জানিয়েছিলেন, ‘‘২০০৯ সালে নিজে কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ভারতের মাটিতে একাধিক সংস্থাও আমি গড়ে তুলি। পাশাপাশি, দু’টি সংস্থাকে অধিগ্রহণও করেছিলাম। তার মধ্যে একটি বিএসসি-তে নথিভুক্ত হয়, আর অন্যটির অনুমোদন দিয়েছিল RBI।’’
মূলত, বিশ্বনাথ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের সাথে পা রেখেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ভোগ্যপণ্য, ফিনটেক, সৌরশক্তি, স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে শুরু করে স্বর্ণশোধনাগার এবং দুবাইয়ে বুলিয়ন ট্রেডিংয়ের ব্যবসার মত ক্ষেত্রগুলি। পাশাপাশি, চলতি বছরের গোড়ায় বৈদ্যুতিন হাইড্রোজ়েন ট্রাক তৈরির জন্য বিশ্বনাথ নিজের রাজ্যে ওড়িশায় গাড়ি তৈরির কারখানা নির্মাণের লক্ষ্যে ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করেন বলে জানা গিয়েছে।
সর্বোপরি, শিল্পপতি হিসেবে সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড এবং দানধ্যানেও মন দিয়েছেন বিশ্বনাথ। ইউনেস্কোর সাথে যুক্ত হয়ে দেশের একাধিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন জনহিতকর কাজ তিনি করেছেন। শুধু তাই নয়, ভারতে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা প্রায় ৫০০ মেয়ের পড়াশোনার খরচের দায়িত্বও নিয়েছেন বিশ্বনাথ।
এমতাবস্থায়, তিনি লন্ডনে জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের জন্য এবার ২৫০ কোটি টাকা দান করলেন। জানা গিয়েছে, ওই ২৫০ কোটি টাকার মধ্যে ইতিমধ্যেই ৭০ কোটি টাকা আলাদা করে রাখা হয়েছে। যেটিকে কাজে লাগিয়ে লন্ডনে জগন্নাথ মন্দিরের জন্য প্রায় ১৫ একর জমি কেনা হবে। পাশাপাশি, মন্দিরের জন্য লন্ডনে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও খবর মিলেছে।