বাংলাহান্ট ডেস্কঃ নেহাতই কিশোরী বেলায় মাওবাদী দলে নাম লিখিয়েছিলেন কোয়া উপজাতির মেয়ে অনসূয়া সীতাক্কা (Ansuya Sitakka) । তখন তিনি ১৫। তার পরে রাতের অন্ধকারে, দিনের আলোয় পুলিশ-প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে পাহাড়ে-জঙ্গলেই ঘুরে বেরিয়েছেন অস্ত্র হাতে। মাওবাদী দলে কম্যান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। আট বছর আন্ডারগ্রাউন্ড ছিলেন। আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকার সময় পুলিশের এনকাউন্টার থেকে বেঁচে পালিয়েছেন। স্বামীও ছিলেন মাওবাদী নেতা। মারা গিয়েছেন এনকাউন্টারে। হারিয়েছেন ভাইকে। ২০০৪-এ আত্মসমর্পণ করে সীতাক্কা ফেরেন মূলস্রোতে। ২০০৯-এ প্রথম বিধায়ক হন মুলুগু থেকে। ২০১৮-য় ফের জয়ী হন ওই আসনে। এলএলবি পাশ করেন। ওয়ারাঙ্গল কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজও করেছেন। আইন পড়িয়েছেন একমাত্র ছেলেকেও।
জঙ্গলমহলের মানুষের অধিকার সুরক্ষিত করতে এক সময় হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। উদ্দেশ্য বদলায়নি। তবে পথ বদলে এখন তিনিই হয়ে উঠেছেন প্রকৃত জননেত্রী। পুরোনো অভ্যাসে বেশির ভাগ হেঁটে, কখনও বা গোরুর গাড়িতে পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে মাথায় বস্তা নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাল, ডাল, তেল, সব্জি থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দিচ্ছেন তেলঙ্গানার মুলুগুর বিধায়ক দানাসারি অনসূয়া সীতাক্কা। গত ২৬ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত চারশোরও বেশি গ্রামে পৌঁছেছে সাহায্য। বছর ৪৮-এর এই কংগ্রেস বিধায়কের কথায়, ‘গভীর জঙ্গলের ভিতরে, যেখানে যান চলাচল করে না, বিদ্যুৎ নেই, জলের সমস্যা, বাড়িঘরের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ, সেখানে সরকারি কোনও সাহায্য পৌঁছয় না। কেউ এঁদের কথা ভাবে না। তাঁদের সমস্যা যাতে কিছুটা লাঘব হয়, সেই উদ্দেশ্যে আমার এই উদ্যোগ।’
মুলুগু তেলঙ্গানার আদিবাসী অধ্যুষিত বিধানসভা। প্রায় সাড়ে ছ’শো গ্রাম। তাই চষে বেড়াচ্ছেন সীতাক্কা। মঙ্গলবার টেলিফোনে ‘এই সময়’কে বলছিলেন, ‘এখানে ৭০-৭৫টা গ্রাম একেবারে প্রত্যন্ত। তার মধ্যে প্রায় ৬৮টি গ্রামে আমরা পৌঁছেছি।’ রবিবারই গিয়েছিলেন পেনুগোলু গ্রামে। জঙ্গলঘেরা গ্রামে খান চল্লিশেক পরিবারের বাস। আধুনিক সভ্যতার প্রায় কোনও সরঞ্জামই সেখানে পৌঁছয়নি। জায়গাটা তাঁর বিধানসভা এলাকাতেও পড়ে না। তবু পাঁচটি পাহাড় টপকে, জঙ্গলের ভিতরে ২০ কিলোমিটার হেঁটে ত্রাণ পৌঁছতে গিয়েছেন সীতাক্কা। বলেন, ‘সকাল ছ’টায় বেরিয়ে গ্রামে পৌঁছতে বেজে গিয়েছে বেলা ১২টা। অমন হতদরিদ্র গ্রাম আমিও কখনও দেখিনি। কিন্তু সেখানকার মানুষগুলোর কথাও তো ভাবতে হবে! তাই ওঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’
জলগলঞ্চা, ইলাপুর-সহ বহু দুর্গম গ্রামে মাথায় ত্রাণের বস্তা চাপিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন বিধায়ক। এই সব গ্রামের বাসিন্দারা মূলত দিনমজুরি করেন। রেশন, আধার কার্ড নেই অনেকের। কারণ রাজ্যের নাগরিক হিসেবে অনেককে স্বীকারই করে না সরকার। তার উপরে লকডাউনে কাজ বন্ধ। সীতাক্কার কথায়, ‘এঁদের কাছে কোনও জনপ্রতিনিধি পৌঁছন না। পুষ্টিকর খাবার তো দূর, দু’বেলা পেটই ভরে না মানুষের। শিশুরা অপুষ্ট।’
কঠিন সময়ে যখন রাজনীতি ভুলে বারবার মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় জোর দেওয়া হচ্ছে, সেই সময় আদর্শ জননেত্রী হিসেবে নজির গড়ছেন সীতাক্কা — বাংলায় সীতা দিদি।
তেলঙ্গানা বিধানসভায় মাস্ক ব্যবহার ও কোভিড নিয়ে সচেতনা প্রসারে প্রথম যাঁরা সরব হয়েছিলেন, সীতাক্কা তাঁদের অন্যতম। তবে ত্রাণ নিয়ে যে সব দুর্গম এলাকায় তিনি যাচ্ছেন, সেখানে করোনার ভয় তুলনায় কম। তবু মাস্ক ব্যবহার, বারবার হাত ধোয়া ইত্যাদি বিষয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের সচেতন করছেন সীতাক্কা। পাশাপাশি চলছে পিএইচ ডি-র কাজ। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন বিধায়ক।