১৫০ বছরেও জুটল না ‘হেরিটেজ’ তকমা! কলকাতার ট্রামকে নিয়ে আবেগ কি তবে শুধুই বইয়ের পাতায়?

বাংলাহান্ট ডেস্ক : বছরের পর বছর ধরে কলকাতার রাস্তায় ছুটে চলেছে ট্রাম (Tram)। অফিস ফিরতি কেরানির ঘামের গন্ধ থেকে নতুন প্রেমিক যুগলের হাসির হিল্লোরের সাক্ষী থেকেছে কলকাতার ট্রাম। রবীন্দ্রনাথ থেকে জীবনানন্দ, বহু কবির কবিতার লাইনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতার ট্রাম। সময়ের সাথে বদলেছে জীবন যাত্রা। কলকাতার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত এখন চোখের নিমেষে চলে যাওয়া যায় মেট্রোর সাহায্যে। তবে ট্রামকে নিয়ে এত কথা কেন তাহলে?

মানুষ চলে যায়, থেকে যায় স্মৃতি। পুরনো সেই দিন চলে গেছে কালের গর্ভে। কিন্তু পুরনো সেই দিনের স্মৃতি হয়ে রয়ে গিয়েছে কলকাতার ট্রাম। একটা সময় ছিল যখন গোটা কলকাতার (Kolkata) বুক চিরে দাপটের সাথে রাজ করত এই ট্রাম। কিন্তু সেই রাজত্ব এখন মাত্র এসে দাঁড়িয়েছে দুটি রুটে। আজ থেকে বছর দশেক আগেও কলকাতায় চালু ছিল ৩৭ টি ট্রাম রুট। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য বেশ কিছু রুটের লাইনের উপর দেওয়া হয়েছে পিচের আস্তরণ। এমনকি বন্ধ হয়ে গিয়েছে শহরের প্রাচীনতম ট্রাম রুট ধর্মতলা-খিদিরপুর লাইনটিও।

Tram

তবে এখনও কলকাতার রাস্তাঘাটে দেখা মেলে ট্রামের। এমন অবস্থায় কলকাতার ট্রাম প্রেমীরা প্রশ্ন তুলেছেন, দেড়শ বছর পার করলেও এখনও কেন কলকাতা ট্রাম এর জুটলো না হেরিটেজ তকমা? বিষয়টি নিয়ে কলকাতার গণপরিবহন বিষয়ের গবেষক সৌভিক মুখোপাধ্যায় বলেছেন, হেরিটেজ তকমা পেতে কোন বাধা নেই কলকাতার ট্রামের। ইউনেস্কোর যেসব গাইডলাইন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল কোন পরিষেবা চালু হওয়ার পর সেটি বন্ধ হয়েছে কিনা? কলকাতা ট্রাম হয়নি।

পাশাপাশি তার আরোও সংযোজন, এছাড়াও ইউনেস্কোর একটি জিজ্ঞাসা থাকে, এই পরিষেবা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নাকি সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য? সেক্ষেত্রে বলাই যায় কলকাতার ট্রাম বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিয়ে এসেছে। অন্যদিকে প্রযুক্তিগত ভাবে যে গাইড লাইনে আছে সেটাও কলকাতা ট্রামের ক্ষেত্রে একই রয়েছে। সমস্যা হল ট্রামকে নিয়ে কোন উদ্যোগ নেই।

মাঝেমধ্যেই গুঞ্জন শোনা যায় যে কলকাতার ট্রামকে হয়ত তুলে দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ট্রাম তুলে দেওয়া হবে না। তবে দূর্গা পূজার মতো ট্রামও যাতে হেরিটেজ তকমা পায় সে বিষয়টি তিনি মনেপ্রাণে চান। তবে এরই সাথে তিনি বলেন যে এই বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে পরিবহন দপ্তরের কোনও ভাবনা চিন্তা নেই।

Tram

তার কথায়, “আমাদের ফেয়ারওয়েল দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই ট্রামকে। বরং ভাবা হচ্ছে নতুন একটি হেরিটেজ রুট চালু করার কথা। এই রুটে ট্রাম ধর্মতলা থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত পর্যটকদের নিয়ে যাবে।” কলকাতার ট্রামের হেরিটেজ তকমা পাওয়ার বিষয় কি ভাবছে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি? এ বিষয়ে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “কখনও ভাবা হয়নি এই বিষয়টি নিয়ে। তবে আমি কথা দিচ্ছি এই বিষয়ে আমি খোঁজ নেব। কথা বলব কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখির সাথে।”

কলকাতায় অস্ট্রেলিয়ান ওয়েলার ঘোড়ায় টানা প্রথম মিউনিসিপাল ট্রামওয়ে চলেছিল ১৮৭৩ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি। এরপর লোকসানের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় সেই রুট। তারপর নানান বিবর্তনের পর ১৮৮২ সালের কলকাতায় প্রথম স্টিম চালিত ট্রাম আসে। চৌরঙ্গী ও খিদিরপুর রুটে শুরু হয় প্রথম স্টিম চালিত ট্রামের যাতায়াত। ১৯০২ সালের পর শুরু হয় বিদ্যুৎ চালিত ট্রাম। এটাই ছিল এশিয়া মহাদেশের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম পরিষেবা।

Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর