বাবা ঝালমুড়ি বিক্রেতা, কে জোগাবে উচ্চশিক্ষার খরচ! মাদ্রাসায় প্রথম হয়েও চিন্তায় সরিফা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : গতকাল প্রকাশিত হয়েছে এবারের হাই-মাদ্রাসা, আলিম এবং ফাজিলের ফলাফল। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের তরফে থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এদিন ফল ঘোষণা করা হয়। এবারে পরীক্ষা শেষের ৪০ দিনের মাথায় প্রকাশিত হল হাই মাদ্রাসার ফলাফল। প্রথম স্থানে রয়েছে মালদহের ছাত্রী সারিফা খাতুন। এবারে মাদ্রাসা বোর্ডের মেধাতালিকায় বাজিমাত মালদা জেলার। প্রথম দশে ৬ পড়ুয়াই মালদহের। তবে পাশের নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর।

মাদ্রাসা বোর্ডে রাজ্যের সেরা দুই ছাত্রী একই স্কুলের। ভাদো মুসলিম গার্লস মিশনের পড়ুয়া তারা। দু’জনেই বটতলা আদর্শ হাইমাদ্রাসা থেকে এবারের পরীক্ষায় বসে। রাজ্যে মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম সারিফা খাতুনের প্রাপ্ত নম্বর হল ৭৮৬। বাবা উজির হোসেন ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালান। মা সোয়েদা বিবি গৃহবধূ। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চায় সারিফা। উচ্চশিক্ষার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য চান মাদ্রাসা পরীক্ষার প্রথম। পরিবারের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল নয়। উচ্চশিক্ষায় সাহায্য করুন মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকার। এমনটাই দাবি জানিয়েছেন সারিফার বাবা উজির হোসেন এবং মা সোয়েদা বিবি।

করোনাকালেও পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিতে কোনও কমতি ছিল না তার। সরিফা বলছেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল আমি এক থেকে দশের মধ্যে থাকব। শিক্ষকেরাও বলতেন, আমি ভাল ফল করব। কিন্তু প্রথম হব সেটা সত্যিই ভাবতে পারিনি। খবর পাওয়ার পর এখন সত্যি দারুণ লাগছে।’ সরিফা জানালেন, বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চান তিনি। কিন্তু অভাবের সংসারে এই স্বপ্নপূরণ কিভাবে সম্ভব, তা ভেবে নিজেও চিন্তিত সরিফা। অন্যদিকে রাজ্যে মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে ভাদো মুসলিম গার্লস মিশনের ইমরানা আফরোজ। বটতলা আদর্শ হাইমাদ্রাসা থেকে সেও সারিফার মতোই পরীক্ষায় বসেছিল।

আনন্দ করার দিনেও আনন্দ নেই সরিফার বাড়িতে। থাকবে কী করে? ঝালমুড়ি বিক্রেতার মেয়ে প্রথম হলেও টানাটানির সংসারে উচ্চশিক্ষার খরচ নিয়ে চিন্তা যে আনন্দকে চাপা দিয়ে দিচ্ছে। মেয়ের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সরিফার বাবা, মা। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়ার সংসারে তাঁরা বুঝতেই পারছেন না, এ বার কী করে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাবেন। নিত্য অভাব যাতে ভবিষ্যতে তাঁর পড়াশোনায় বাধা হয়ে না-দাঁড়ায়, তার জন্য ফলাফল হাতে পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করলেন সরিফা।

চলতি বছরের ২১ মার্চ শেষ হয়েছিল পরীক্ষা। সোমবার ৩০ এপ্রিল অর্থাৎ পরীক্ষা শেষের ঠিক ৪০ দিনের মাথায় প্রকাশিত হল হাই মাদ্রাসার ফল। এদিন মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন ফল ঘোষণা করেন। এ বছরে পাশের হার ৮৭.০২ শতাংশ। প্রথম স্থানে মালদহের বটতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সারিফা খাতুন। দ্বিতীয় হয়েছেন ইমরানা আফরোজ এবং যুগ্ম ভাবে তৃতীয় স্থান দখল করেছেন মোঃ ওয়াকিল আনসারি ও আজিজা খাতুন।


Sudipto

সম্পর্কিত খবর