বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গতবছর আমফানের স্মৃতি এখনো দগদগে ঘায়ের মতই রয়ে গেছে মানুষের মনে। কোভিড প্যানডেমিকের মধ্যে কুড়ি মে কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাণ্ডব চালিয়েছিল আমফান। এই ঘূর্ণিঝড়ে একদিকে যেমন রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছিল জরুরী পরিষেবা। তেমনি গোটা কলকাতা শহরে বেশ কয়েকদিন যাবত ছিল বিদ্যুৎহীন। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলার অবস্থাও ছিল তথৈবচ। ভেঙে পড়া গাছ, তছনছ হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি আর মানুষের হাহাকার ছবিটা ছিল অনেকটা এরকমই। গত বছরের তুলনায় এবার অনেকটাই বেড়েছে করোনার আক্রমণ। রোজই বাংলায় আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। এরইমধ্যে আমফানের দুঃস্বপ্নের স্মৃতি ফিরিয়ে শীঘ্রই আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ বা ইয়াশ (Cyclone Yash )। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে এখন প্রস্তুতি তুঙ্গে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকেই ভয়ঙ্কর হচ্ছে যশঃ
২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়েছিল আয়লা। সেই বিধ্বংসী তাণ্ডবলীলার পর গতবছরের আমফানের স্মৃতি এখনো দগদগে। এরই মধ্যে ফের একবার বঙ্গোপসাগরে শনিবার অর্থাৎ ২২ মে নাগাদ তৈরি হতে পারে একটি নিম্নচাপ। সেই নিম্নচাপ তৈরি হবার ৭২ ঘন্টার মধ্যে শক্তি সংগ্রহ করবে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। ‘যশ’ নামটি রেখেছে ওমান। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝড়ের অভিমুখ মূলত উত্তর-পশ্চিমে।
কোথায় কবে আছড়ে পড়বে এই ঘূর্ণিঝড় যশ :
আবহাওয়া দপ্তরের আশঙ্কা অনুযায়ী, ২৬ মে অর্থাৎ বুধবার পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে ‘যশ’। তারই জেরে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২৪ তারিখও৷ আবহাওয়া দপ্তরের অনুমান, এই ঝড়ে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, শঙ্করপুর সমুদ্র সৈকত। অন্যদিকে, ওড়িশার বালেশ্বর উপকূলেও যথেষ্ট ক্ষতি করতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। আবহাওয়াবিদরা আরো জানাচ্ছেন, আমফানের থেকেও অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। যত বেশি সময় সমুদ্র থেকে শক্তি সঞ্চয় করবে ‘যশ’, ততই তা আরো বেশি ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে।
মৎস্যজীবীদের জন্য জারি সর্তকতাঃ
আমফানের প্রভাবের কথা মাথায় রেখে যশ-এর প্রস্তুতিপর্বেও কোন খামতি রাখত চায়না পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা সরকার। ইতিমধ্যেই মৎস্যজীবীদের জন্য জারি করা হয়েছে সর্তকতা। ২৪ মের পর থেকে সমস্ত রকম সমুদ্রযাত্রা আপাতত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে পর্যটকদেরও। ইতিমধ্যেই উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে সরকার।
মমতা সরকারের পদক্ষেপঃ
গতবছর আমফানের মত ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে যথেষ্ট নাজেহাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মমতা সরকারের। কোনভাবে মৃত্যু ঠেকানো গেলেও জরুরী পরিষেবা চালু করতে লেগে গিয়েছিল অনেকটা সময়। এমনকি রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভও চালিয়েছিল জনতা। তাই এ বছর আর কোনো খামতি রাখতে চায় না সরকার। সেই কারণে ইতিমধ্যেই ছুটি বাতিল করা হয়েছে জরুরী পরিষেবা সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সরকারি কর্মীদের। বুধবার উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে মমতা নির্দেশ দিয়েছেন, ত্রাণের জন্য তার্পোলিন, মেডিসিন, শুকনো খাবার, জল মজুত রাখতে হবে। ইতিমধ্যেই দীঘা অন্যান্য উপকূলবর্তী এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমফানের মতো একইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রস্তুত ওড়িশা সরকারওঃ
আমফানের পর আরেকবার এই ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’-এর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত ওড়িশা সরকারও। সরকারি চাকরিতে ইতিমধ্যেই ১০টি উপকূলীয় জেলা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মৎস্যজীবীদেরও। ওড়িশা সরকার জানিয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি সর্বদা নিরীক্ষণ পড়ছে তারা। ঝড়ের মোকাবিলা করতে সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আশঙ্কা করোনা রোগীদেরঃ
এই মুহূর্তে করোনায় ওড়িশা কিছুটা কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যথেষ্ট সমস্যায় রয়েছে বাংলা। অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় নির্ভরতা অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেটর। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়লে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হবে রোগীদের। ইতিমধ্যেই তাওকটের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত মুম্বাই, কর্ণাটক। ছবিটা যথেষ্ট আশঙ্কাজনক বাংলার জন্যও। এখন আগামী ২৬ মে প্রস্তুত থাকতে হবে দুই রাজ্যকেই।