বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত বছর গ্রেফতার হয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (Sujay Krishna Bhadra)। গ্রেফতারির পর বহু সময় থেকেই সুজয়কৃষ্ণ ওরফে কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছিল ইডি (ED)! তবে প্রায় চার মাস ধরে চেষ্টা করেও সফল হননি ইডি আধিকারিকরা। শেষবার এসএসকেএম হাসপাতালের বাইরে অ্যাম্বুলেন্স নিয়েও পৌঁছে গিয়েও খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল ইডিকে। তবে বুধবার রাতে হঠাৎই কণ্ঠস্বর সংগ্রহের বিষয়ে তৎপর হয়ে ওঠে ইডি।
বুধবার রাতে হঠাৎ অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসএসকেএমে পৌঁছে যায় ইডি । হাসপাতাল থেকে কালীঘাটের কাকুকে বের করে জোর তৎপরতার সাথে নিয়ে যাওয়া হয় জোকা ইএসআই হাসপাতালে। রাত ১২.৫২ মিনিটে চিকিত্সক এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ মতো কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয় কালীঘাটের কাকুর। তবে এরপর থেকেই যে প্রশ্ন চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে যে এই ‘অসাধ্য-সাধন’ সম্ভব হল কিভাবে?
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার (Justice Amrita Sinha) নির্দেশেই তড়িঘড়ি ইডি ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করার তোড়জোড় করে কি না সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়। বুধবার বিচারপতি সিনহার এজলাসে রুদ্ধদ্বার শুনানির পরই কি তৎপরতা দেখাল ইডি? গতকাল সকালের দিকে এই প্রশ্নের উত্তর অধরাই ছিল। তবে বেলায় আদালতের নির্দেশনামা প্রকাশ্যে আসতেই সব জলের মত পরিষ্কার হয়ে গেল।
আদালতের নির্দেশনামায় দেখা গেল সেখানে রীতিমতো সময় বেঁধে দিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যে কাজ ইডি চার মাস ধরে চেষ্টা করেও পারেনি তা করে ফেলতে হবে এক রাতের মধ্যেই। অর্থাৎ, রাতারাতি সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বর নমুনা সংগ্রহ করার কড়া নির্দেশ ছিল ইডি অধিকারিকদের ওপর।
সূত্রের খবর, এর আগে এই একই ইস্যুতে গত ১৪ ডিসেম্বর ইডির কলকাতা জোনের সহকারী ডিরেক্টর বিচারপতি সিনহার এজলাসে একটি রিপোর্ট জমা করেন। সাত পাতার সেই রিপোর্ট দেখে বিচারপতির সাফ পর্যবেক্ষণ ছিল ইডি সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বর সংগ্রহের যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। তবে কোনও কারণে সফল হয়নি। তবে ওই রিপোর্টে এটাও পরিষ্কার ছিল যে সুজয়কৃষ্ণের শরীরে বড় কোনও অসুস্থতা নেই। অর্থাৎ কণ্ঠস্বরের নমুনা দিতে পারবেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘আজ প্রমাণ হল মাননীয়া আপনি মিথ্যাবাদী’, হঠাৎ পুরোনো টুইট সামনে এনে তোলপাড় ফেলে দিলেন শুভেন্দু
বুধবার বিচারপতি সিনহার এজলাসে রুদ্ধদ্বার শুনানিতে তার নির্দেশে ছিল, সেদিনই রাত ৮টার মধ্যে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হবে। দু’ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ পক্রিয়া শেষ করতে হবে। তবে এখানেই সাহা নয়, নির্দেশে যে শুধু পরিকল্পনাই বলে দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছিল কড়া হুঁশিয়ারিও।
ইডির জয়েন্ট ডিরেক্টরের পাশাপাশি এসএসকেএমের সুপারকেও কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। সাফ বলা হয়েছিল ইডির আধিকারিকেরা পৌঁছালে সময় নষ্ট না করে তাদের হাতে সুজয়কৃষ্ণকে তুলে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল)-র ডিরেক্টরকে নির্দেশ ছিল, কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের সময় সিএফএসএল-এর এক অফিসারকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে।
আদালতের নির্দেশে এমনও বলা ছিল কথার অন্যথা হলে গোটা প্রক্রিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং দায়বদ্ধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অন্যদিকে সূত্রের খবর, আদালত চত্বরে সেই দিন নিজের চেম্বারে প্রায় রাত ৯টা পর্যন্ত ছিলেন বিচারপতি সিনহা। মনে করা হচ্ছে এই গোটা বিষয়টায় নজর ছিল আদালতেরও।