বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের (100 Days Job) টাকা নিয়ে বারংবার অভিযোগ উঠে এসেছে কেন্দ্রের (Central Government) বিরুদ্ধে। এক বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। এই প্রকল্পে রাজ্যকে এক টাকাও দেয়নি কেন্দ্রের মোদী সরকার। নিজেদের প্রাপ্য আদায়ের জন্য বহুবার দাবি জানিয়েছে মমতা সরকার (Mamata Government)। আলোচনা, চিঠি-পাল্টা চিঠি, শর্ত আরোপ, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, বলতে গেলে কোনোদিক থেকে কোনো চেষ্টার ক্ষেত্রেই খামতি রাখেনি। তবে এত কিছু মেনে, শত চেষ্টা করেও লাভের লাভ কিছুই হয়নি।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এক বৈঠকে রাজ্যর এই বঞ্চনার দশা তুলে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের প্রশ্নবাণ ছোড়া হয়। যাতে কার্যত মুখে কুলুপ আটেন তারা। নবান্নের পদস্থ আমলাদের একের পর এক তীক্ষ্ণ প্রশ্ন নাস্তানাবুদ কেন্দ্র। প্রসঙ্গত, গত সোমবার কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এম্পাওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের আমলাদের বৈঠক হয়। কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব শৈলেন্দ্র সিং। অন্যদিকে, রাজ্যের তরফে ছিলেনপঞ্চায়েত সচিব পি উলগানাথন সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পদস্থ কর্তারা।
সূত্রের খবর, সেখানেই নানা প্রশ্ন তুলে ধরা হয় কেন্দ্রের কর্তাদের সামনে, রাজ্যের তোপের মুখে পড়েও কোনও যুক্তিযুক্ত জবাব দিতে পারেনি কেন্দ্র। নবান্ন সূত্রে খবর, সেখানে উপস্থিত রাজ্যের কর্তারা প্রশ্ন করেন, কেন্দ্রের সব শর্ত মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং প্রত্যেকটি চিঠির উত্তর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেওয়ার পরও তাদের পাওনা বরাদ্দ আটকে রাখা হচ্ছে কেন? প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় সরকারের সচিব পর্যায়ের আমলারা জানান, সংশ্লিষ্ট আইনের (MGNREGA) ২৭ নম্বর ধারা ‘রিভোক’ বা খারিজ না হলে এই বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
পাশাপাশি বলা হয়েছে, ‘১০০ দিনের কাজ’ প্রকল্পে অনিয়ম ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের উপর এই নির্দিষ্ট ধারা আরোপ করা হয়, যেই ধারার প্রয়োগ করে রাজ্যের বরাদ্দ আটকে রাখা যায়। কেন্দ্র এই আরোপিত ধারা তুলে নিলে তবে পাওনা পাবে রাজ্য। এরপরই খবর মেলে, এই পরিস্থিতিতে সমস্ত কারণ দর্শিয়ে কেন্দ্রকে দ্রুত ওই ধারা খারিজের জন্য চিঠি দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার নবান্ন সভাঘরে শিল্প বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রের হাজার বঞ্চনা সত্ত্বেও আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকব। পাশাপাশি রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “নিত্যনতুন অজুহাত ছাড়া বাংলার টাকা আটকে রাখার আর কোনও অস্ত্র নেই ওদের হাতে। এটা আরও একবার প্রমাণিত হয়ে গেল।”
সামাজিক মাধ্যমে এই নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দেগেছেন তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী (Arup Chakraborty)। একটি ফেসবুক পোস্ট করে তিনি লেখেন, “১০০ দিনের প্রকল্পের পুরো টাকা আটকে দিল কেন্দ্ৰ। রাজ্য ওদের শর্ত মেনে সব নথি দেওয়ার পরেও রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দিল না।প্রতিহিংসাপরায়ণ কেন্দ্ৰীয় সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। বৈঠকে রাজ্যের পঞ্চায়েত সচিব পি উলগানাথনের প্রশ্নের জবাবে কার্যত কোনো উত্তরই দিতে পারেন নি কেন্দ্ৰীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব শৈলেন্দ্র সিং।”
নেতার সংযোজন, “১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা আটকানো মানে আমাদের সাথে রাজনৈতিক লড়াইয়ে পেরে না উঠে রাজ্যের কোটি কোটি গরীব মানুষের পেটে সরাসরি লাথি মারল কেন্দ্রীয় সরকার। অবশ্য এগুলো তো আর খবর নয়, তাই ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এই নিয়ে আলোচনা হবে না। চোখে চোখ রাখা মিডিয়ার হিম্মত হবে কি এই নিয়ে আলোচনা করার? জবাব চায় গ্রাম বাংলার গরীব খেটে খাওয়া মানুষ, যাদের হকের টাকা কেন্দ্র মেরে দিল এবছর।”