বাংলাহান্ট ডেস্ক: নানা পাটেকর (Nana patekar), অভিনয়ের জন্য তো বটেই, মানবিকতার জন্য অনেক বেশি লোকপ্রিয় তিনি। সিনেজগতের জনপ্রিয় তারকা হয়েও বিলাসব্যসন ছেড়ে চলে অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করেন নানা। নিজের উপার্জনের অধিকাংশটাই মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিয়েছেন। এখন এক কামরার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন অভিনেতা।
১৯৫১ সালে মহারাষ্ট্রের রায়গড়ে জন্ম নানা পাটেকরের। তাঁর আসল নাম বিশ্বনাথ পাটেকর। ছোপ থেকেই অভাব অনটনের মুখ দেখেই বড় হয়েছেন তিনি। বাবা ছিলেন একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী, মা গৃহবধূ। ছোট থেকেই অভিনয়ের স্বপ্ন দেখলেও সংসারের দিকে তাকিয়ে তা কোনওদিনই মুখ ফুটে বলতে পারেননি নানা।
১৩ বছর বয়স বাবাকে সাহায্য করার জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি ফিল্মের পোস্টার এঁকে রোজগার করতে শুরু করেন নানা। পোস্টার পিছু ৩৫ টাকা করে পেতেন। জেব্রা ক্রসিং রঙ করার কাজও করেছেন এক সময়। ছোটবেলায় দুষ্টুমিরও কীর্তি রয়েছে তাঁর। জানা যায়, একবার তাঁকে সামলাতে না পেরে মাসির বাড়ি দিয়ে এসেছিলেন নানার মা। দুদিন যেতে না যেতেই আবার তাঁর মাসি তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, তিনি নাকি ভাই বোনদের কুবুদ্ধি দিতেন।
কলেজে পড়ার সময় থেকেই নাটকের সঙ্গে যুক্ত হন নানা পাটেকর। কয়েকটি বিজ্ঞাপন এজেন্সির হয়েও কাজ করেছেন। ২৭ বছর বয়সে কলেজের সহপাঠী নীলকান্তি পাটেকরকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের এক বছর পরেই তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। হারান প্রথম সন্তানকেও। তবে হার মানেননি নানা। ১৯৭৮এ ‘গমন’ ছবির হাত ধরে বলিউডে পা রাখেন। তাঁর অভিধয় দেখে একের পর এক ছবির প্রস্তাব আসতে থাকে।
জানা যায়, ‘প্রহার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিন বছর বিশেষ সেনা ট্রেনিং করেছিলেন নানা পাটেকর। এই ছবির পর তাঁকে ভারতীয় সেনার ক্যাপ্টেন মর্যাদা দেওয়া হয়। শোনা যায়, কার্গিল যুদ্ধের সময়ও নাকি কিছু দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। বলিউডে ঢোকার পর থেকেই যা রোজগার করেছেন তার সিংহভাগটাই দিয়ে দিয়েছেন দরিদ্র অসহায় মানুষের কল্যাণে। অনেক সময় পুরো উপার্জনটাই দান করেছেন কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায়।
এখন স্ত্রীয়ের থেকে আলাদা থাকেন নানা। মুম্বইতে ৭৫০ স্কোয়ারফিটের এক কামরার একটি ফ্ল্যাটে সংসার তাঁর। ২০১৫তে তৈরি করেছেন নিজের সংস্থা ‘নাম ফাউন্ডেশন’ যা মহারাষ্ট্রের খরা কবলিত এলাকায় কাজ করে। ২০১৫ সালে বিদর্ভ, লাতুর এলাকায় ১৭৫টি কৃষক পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছে তাঁর বেসরকারি সংস্থা। মহারাষ্ট্রের বন্যাপ্রবণ এলাকায় ৫০০টি ঘর তৈরির কথাও ঘোষনা করেছেন নানা। তবে এসব কিছুই নিজের ইচ্ছেয় করেন অভিনেতা। ইতিমধ্যেই ফিরিয়ে দিয়েছেন শিবসেনার প্রস্তাব। রাজনীতিতে আসবেন না তিনি। নানার কথায়, মানুষের উপকার করলে তাঁর মন শান্ত থাকে।