বাংলা হান্ট ডেস্ক : বিগত ৫ দিনে দ্বিতীয়বার মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh) সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। গতকাল শাহডেলের লালপুরে হাজির হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি একটি জাতীয় অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ মিশন চালু করেন। এরই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উঠে আসে রানী দুর্গাবতীর (Queen Durgabati) কথা। তাঁর বীরত্বের কথা মাথায় রেখে বিরাট ঘোষণা করলেন নমো।
প্রধানমন্ত্রী মোদি এদিন ঘোষণা করেন রানী দুর্গাবতীর ৫০০ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে দেশ জুড়ে হবে বিরাট অনুষ্ঠান। আগামী ৫ অক্টোবর রানীর জন্মদিন। সেই দিনেই অনুষ্ঠিত হবে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। শুধু তাই নয়, রানীর জীবনের উপর নির্ভর করে তৈরি হবে সিনেমা। তাঁর নামে রুপায় মুদ্রাও প্রকাশ করা হবে বলে ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
এদিন নমো বলেন, ‘আমি আপনাদের মাঝে রানী দুর্গাবতীর বীরগাথার এই ভূমিতে এসেছি। সাধারণ মানুষের সামনে আমি ঘোষণা করছি আগামী ৫ অক্টোবর রানীর জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে সরকার। রানীর জীবন নিয়ে তৈরি হবে সিনেমাও।
প্রধানমন্ত্রী এদিন আরও জানান, ‘রানী দুর্গাবতীর নামে বিশেষ রুপার মুদ্রা চালু করা হবে। এই দেশে ৫০০ বছর আগে জন্মানো রানী আমাদের কাছে মায়ের সমান। তাঁর অনুপ্রেরণা গোটা দেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে সরকার।
কে এই রানী দুর্গাবতী? রানী দুর্গাবতী (Rani Durgabati) ছিলেন মধ্যপ্রদেশের গন্ডোয়ানা অঞ্চলের নায়িকা। তিনি ১৫২৪ সালের ৫ই অক্টোবর কালিঞ্জরের রাজা কীর্তিবর্মন দ্বিতীয় চান্দেলার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তার রাজ্য ছিল গড়মন্ডলা, যার কেন্দ্র ছিল জবলপুর। তিনি তার সাহস, ন্যায়বিচার এবং সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি তার জীবদ্দশায় অনেক যুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে লড়াই করেছেন। মূলত তাঁর বীরত্বেই গড়মন্ডলা বাহিনী একাধিক যুদ্ধে জয়লাভ করে।
#WATCH | Shahdol, Madhya Pradesh: The 500th birth anniversary of Rani Durgavati is on October 5. The government of India will celebrate it across the country. A film will be made based on her life…a silver coin of Rani Durgavati will also be launched. Government will also… pic.twitter.com/mfsLoCr0Lr
— ANI (@ANI) July 1, 2023
স্বামীর মৃত্যুর পর সিংহাসন গ্রহণ করেন রানী দুর্গাবতী। এর পাশাপাশি ছেলেকে একই পথ দেখান। তার শেষ যুদ্ধ ছিল মুঘল সম্রাট আকবরের সেনা স্বামী খাজা আব্দুল মজিদ আসফ খানের সঙ্গে। এই সময় আহত হয়েও তিনি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত, তিনি মোগলের হাতে আত্মসমর্পণ বা মারা যাওয়ার চেয়ে, নিজেকে ছুরি দিয়ে ছুরিকাঘাত করাই উপযুক্ত মনে করেছিলেন।
রাণী মনে করতেন, অসম্মানের চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। তাই আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মোগল বাহিনীর সঙ্গে অসম যুদ্ধে চললেন রাণী দুর্গাবতী। গৌড় ও নর্মদার মাঝে অবস্থিত এই নরাই নামক স্থানেই শুরু হলো দু’ পক্ষের ভয়ংকর লড়াই। যুদ্ধে রাণীর ফৌজদার অর্জুন দাস মারা গেলেন। রাত নামলো যুদ্ধক্ষেত্র নরাইয়ে। রাণী চাইলেন রাতেই শত্রুশিবিরে আক্রমণ করতে। কিন্তু পাত্র-মিত্ররা রাজি না হওয়ায় তা সম্ভব হলো না। এদিকে সকাল হতেই বড়ো বন্দুক হাতে তেড়ে এলেন মোগল সেনাপতি আসফ খান। রাজকুমার বীরনারায়ণ শুরু করলেন তুমুল যুদ্ধ। বীরনারায়ণের বীরত্বে এই অসম যুদ্ধেও তিন তিনবার সুসজ্জিত মোগল বাহিনী পিছু হটে যায়।
কিন্তু একসময় এই যুদ্ধে আহত হন বীরনারায়ণ। নিরাপদে যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়েন তিনি। হাতির পিঠে চেপে এবার যুদ্ধক্ষেত্রে এলেন রাণী দুর্গাবতী। তাঁর বীরত্বে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছিল মোগল সেনা। হঠাৎই একটা তীর এসে লাগে রাণীর কানের পাশে। এরপর ঘাড়েও লাগলো আরও একটা। যন্ত্রণায় সংজ্ঞা হারান রাণী। চেতনা ফিরে পেতেই মাহুত তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু রাণী শুনলেন না। যুদ্ধক্ষেত্রেই আত্মাহুতি দিলেন বীরাঙ্গণা রাণী দুর্গাবতী।