বাংলা হান্ট ডেস্ক: সম্প্রতি Go First এয়ারলাইন দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যে এয়ারলাইনটি সস্তার ফ্লাইট টিকিটে যাত্রীদের বিমান ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দিত সেটাই আজ বন্ধের পথে। ভারতের সবথেকে পুরোনো সংস্থা ওয়াদিয়া গ্রুপের (Wadia Group) মালিকানাধীন এই কোম্পানির দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। তবে, শুধু আমি-আপনিই নন বরং, ৭৯ বছর বয়সী নুসলি ওয়াদিয়াও (Nusli Wadia) এই খবরে আঘাত পাবেন।
ব্রিটানিয়া, বম্বে ডাইং-এর মতো কোম্পানি পরিচালনাকারী সংস্থার এয়ারলাইনের অবস্থা এখন এমন হয়েছে যে, তাদের কাছে তেলের জন্যও টাকা অবশিষ্ট নেই। এটা সত্যিই আশ্চর্যজনক ঘটনা। বর্তমানে নুসলি ওয়াদিয়ার ৩৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তির কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছলেও এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটিকে বলা হয় কর্পোরেট জগতের রাজা।
রতন টাটার ছোটবেলার বন্ধু: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, ওয়াদিয়া গ্রুপ রতন টাটার ঘনিষ্ঠ। পাশাপাশি, নুসলি ওয়াদিয়া এবং রতন টাটা দু’জনেই পার্সি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁরা ছোট থেকেই একে অপরের বন্ধু। তাঁদের দু’জনের মধ্যে এতটাই গভীর বন্ধুত্ব ছিল যে একটা সময় এসেছিল যখন নুসলি ওয়াদিয়া রতন টাটার জন্য টাটা সন্সের চেয়ারম্যানের চেয়ারও ছেড়ে দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, নুসলি জেআরডি টাটাকে তাঁর গুরু এবং পথপ্রদর্শক মনে করতেন। জেআরডি টাটা বম্বে ডাইং স্থাপনে নুসলিকে প্রভূত সাহায্য করেছিলেন।
চেয়ারম্যানের চেয়ার ছেড়ে দিয়েছিলেন রতন টাটার জন্য: জেআরডি টাটার অবসর নেওয়ার পর, যখন টাটা গ্রুপের নতুন চেয়ারম্যানের খোঁজ শুরু হয়, তখন ওয়াদিয়া এই দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন। জেআরডি টাটার মনেও ওয়াদিয়ার নাম এসেছিল। কিন্তু তখন তিনি অনুভব করেছিলেন যে, রতন টাটা চেয়ারম্যান পদের জন্য উপযুক্ত। এদিকে, ওয়াদিয়া যখন জানতে পারলেন যে রতন টাটাও এই দৌড়ে রয়েছেন, তখন তিনি এই দৌড়ে নিজেকে পিছিয়ে নেন। পাশাপাশি, চেয়ারম্যান পদের দৌড় থেকে সরে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
এমতাবস্থায়, ১৯৯১ সালে রতন টাটা, টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হন। পাশাপাশি, রতন টাটা চেয়েছিলেন যে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হোক। তিনি নুসলিকে ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার প্রস্তাবও জানিয়েছিলেন। কিন্তু ওয়াদিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেন। উল্লেখ্য যে, রতন টাটা নুসলি ওয়াদিয়ার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিটি সিদ্ধান্তে কিংবা নতুন কোনো পরিকল্পনায় তাঁর সাথে টাটা পরামর্শ করতেন।
বন্ধুত্বে ফাটল কিভাবে ঘটল: মূলত, নুসলি ওয়াদিয়া স্পষ্ট ভাবে কথা বলার জন্য পরিচিত। তাঁর এই অভ্যাসই রতন টাটার সাথে বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে। ২০০৭ সাল থেকে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। টাটা স্টিল ১২ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ইউরোপের কোরাস স্টিল কিনেছিল। ওয়াদিয়া এই চুক্তিতে খুশি ছিলেন না। এই বিষয়টি নিয়ে রতন টাটা এবং ওয়াদিয়ার মধ্যে কিছুটা বিতর্কও হয়েছিল।
এরপর তিনি রতন টাটার ন্যানো প্রকল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করেন। টাটা এবং মিস্ত্রির মধ্যে বিরোধের সময় এই দূরত্ব সামনে এসেছিল। সাইরাস মিস্ত্রিকে অপসারণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও ছিলেন নুসলি ওয়াদিয়া। পরে তিনি রতন টাটা এবং টাটা সন্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। যদিও পরে এই মামলা প্রত্যাহার করে নেন ওয়াদিয়া। আর এইভাবে দুই বন্ধুর মধ্যে ক্রমশ দূরত্ব বাড়তে থাকে।