বাংলা হান্ট ডেস্কঃ হিন্দু পুরাণ মতে, জৈষ্ঠ্য মাসের অমাবস্যায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সূর্য ও ছায়া পুত্র শনি। সেই কথা মাথায় রেখেই এই বিশেষ দিনে পালন করা হয় শনি জয়ন্তী। কিন্তু এ বছর প্রায় দেড়শ বছর পর এক বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ তৈরি হয়েছে এই তিথিতে। কারণ একই সঙ্গে পড়েছে বছরের প্রথম সূর্য গ্রহণ। আবার সেই একই দিনে রয়েছে হিন্দু নারীদের পালনীয় আচার বট সাবিত্রীর ব্রত। এই তিন বিরল মুহূর্ত এক সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ধর্মীয়ভাবে দিনটি হয়ে উঠেছে ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাধারণত স্বামীর মঙ্গলকামনায় বট সাবিত্রীর ব্রত পালন করে থাকেন হিন্দু মহিলারা। পুরাণের সাবিত্রী সত্যবান কাহিনী নিশ্চয়ই অনেকেরই জানা। নারদ মুনির সঙ্গে পরামর্শ করার পর সাবিত্রীর পিতা মদ্ররাজ অশ্বপতি জানতে পারেন, মাত্র এক বছরের মধ্যেই মারা যাবেন শল্ব দেশের রাজপুত্র সত্যবান। অথচ তাকেই বিবাহ করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কন্যা সাবিত্রী। প্রথমে রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত সাবিত্রীর জেদের কাছে হার মানতে হয় পিতা অশ্বপতিকে। কারণ সাবিত্রী জানান তিনি মনে মনে সত্যবানকে স্বামী রূপে মেনে নিয়েছেন আর তাই তিনি বহুচারী হতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে সত্যবানের সঙ্গে কন্যার বিবাহ দেন অশ্বপতি। এক বছরের মধ্যেই মৃত্যু হয় সত্যবানের। কিন্তু মৃত্যু রাজ যমের সঙ্গে ধর্মযুদ্ধ শুরু করেন সাবিত্রী। তার পাণ্ডিত্যে শেষ পর্যন্ত খুশি হন যম। ফিরিয়ে দেওয়া হয় তার স্বামীর প্রাণ।
এই পৌরাণিক কাহিনীর কথা মাথায় রেখেই এই দিন স্বামীর মঙ্গলের জন্য এই বিরল ব্রতটি পালন করেন হিন্দু নারীরা। তবে এবার একদিকে শনি জয়ন্তী এবং অন্যদিকে সূর্যগ্রহণ অনেকেই বুঝতে পারছেন না কোন সময় পুজো করা সঠিক। কারণ সূর্য গ্রহনের সময় সাধারণত সূতক কাল থাকে যার জেরে সেসময় পুজো করা সম্ভব নয়। কিন্তু এবার সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে না ভারতে। যার ফলে সূতক কালের মান্যতা নেই আসুন দেখে নেওয়া যাক ব্রত পালনের মাহেন্দ্রক্ষণ।
হিন্দু মতে বট সাবিত্রী ব্রতের শুভসময়ঃ
অমৃত কালঃ সকাল ৮টা ০৮ মিনিট থেকে সকাল ৯ টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত।
অভিজিত মুহূর্তঃ সকাল ১১ টা ৫৯ মিনিট থেকে দুপুর ১২ টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত রয়েছে অভিজিত মুহূর্ত।
ব্রম্ভ মুহূর্তঃ ভোর ৪ টা ০৮ মিনিট থেকে সকাল ৭ টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত রয়েছে ব্রম্ভ মুহূর্ত।
পূজার অশুভ সময়ঃ
দুপুর আড়াইটে থেকে বিকেল ৩ টে ৪৭ মিনিট পর্যন্ত রয়েছে রাহুকাল। তাই এ সময়ে পূজা পাঠ অত্যন্ত অশুভ। সকাল ৫ টা ৪৪ থেকে সকাল ৭ টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত রয়েছে যমগণ্ড। সকাল ৪টা ৫৭ মিনিট থেকে সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত থাকছে আডল যোগ। এই সময়ে কোন শুভকাজ সম্ভব নয়। সকাল ১০টা ১২ মিনিট থেকে সকাল ১০টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত থাকছে দূর্মুহূর্ত। এই ব্রতের জন্য যা অশুভ সময়। সকাল ৯টা ০৫ মিনিট থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত চলবে কুলিক কাল। তাই এই সময়েও পূজা করতে পারবেন না হিন্দু রমণীরা।
বট সাবিত্রী ব্রতর গুরুত্বঃ
পৌরাণিক মত অনুযায়ী, বট সাবিত্রী ব্রত পালনে হিন্দু নারীর সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় হয়। এই ব্রত পালনের পর সাবিত্রী সত্যবানের কাহিনী পাঠ করেন হিন্দু নারীরা।