বাংলা হান্ট ডেস্কঃ উত্তরবঙ্গে ফের প্রশাসনিক সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন তিনি। ত্রাণ বিতরণ, ভেঙে পড়া সড়ক ও সেতুর পুনর্নির্মাণ, সব বিষয়েই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তিনি। পাশাপাশি যেসব পরিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে গৃহহীন হয়েছেন, তাঁদের হাতে আর্থিক সহায়তাও তুলে দেবেন তিনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর ঘিরেই রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ফের বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।
“কেন্দ্রীয় তহবিল নয়ছয় করছে রাজ্য সরকার”, অভিযোগ শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari)
শনিবার কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) অভিযোগ করে বলেন যে, রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির নাম পরিবর্তন করে নিজেদের কৃতিত্ব দেখানোর চেষ্টা করছে এবং কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তহবিলের অপব্যবহার করছে। সোমবারও সেই সুরেই আক্রমণ শানিয়ে তিনি আবারও বলেন, “এই রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের নাম বদলে দিচ্ছে, আর সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক নয়ছয় করছে।” বিরোধী দলনেতার দাবি, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ইচ্ছাকৃতভাবে ক্যাগের (CAG) রিপোর্ট পেশ করা হচ্ছে না। কারণ রাজ্য সরকার জানে, কেন্দ্রীয় নিরীক্ষায় বেরিয়ে আসবে বিপুল দুর্নীতি।
“বাংলার বাড়ি আসলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার নকল”, বললেন শুভেন্দু
শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) এদিন অভিযোগ করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এখন উত্তরবঙ্গে নতুন বাড়ি তৈরির এক প্রকল্প চালু করেছেন, যার নাম ‘বাংলার বাড়ি’। কিন্তু এই প্রকল্প আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চালু করা ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’-র অনুকরণ। তাঁর দাবি, “২০২৩ পর্যন্ত এই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার কেন্দ্র থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার অনুদান পেয়েছে।”
বিজেপি বিধায়ক আরও অভিযোগ করে বলেন, তৃণমূলের একাধিক নেতা এই প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, “নওদার এক নেতা ৩৫টি, সাগরদিঘির এক নেতা ১৭টি করে বাড়ি নিজেদের নামে বা ঘনিষ্ঠদের নামে নিয়েছেন। অথচ প্রকৃতভাবে ঘর পাওয়ার যোগ্য মানুষ বঞ্চিত।”
বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলের টাকা ‘অন্য খাতে’, দাবি শুভেন্দুর
বিরোধী দলনেতা আরও বলেন, চলতি অর্থবর্ষে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এসডিআরএফ-এ (SDRF) ৯৮৩ কোটি টাকা দিয়েছে। গত পাঁচ বছরে মোট ৪,৪৭০ কোটি টাকা রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই টাকা অন্য দপ্তরে সরিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর। শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) বক্তব্য, “এই টাকা অন্য কোনও খাতে পাঠানো যায় না। কিন্তু উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সেই টাকা পিএনআরডি বা পঞ্চায়েত দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ওখানে এক ভাইপো ম্যান রয়েছেন, মনোজ পন্থ নিজে সই করেছেন। এগুলো হতে পারে না।”
বিরোধী নেতার অভিযোগ, বাংলার বাড়ি প্রকল্পের অর্থ আসলে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের জন্য বরাদ্দ ফান্ড থেকে দেওয়া হচ্ছে, যা নিয়মবিরুদ্ধ। তাঁর দাবি, প্রায় ১,৩৪৭ কোটি টাকা এইভাবে অন্য দপ্তরে সরানো হয়েছে। শুভেন্দু বলেন, “রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলায় ৫,৯৬০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। তার মধ্যে ৩,৯৭৮ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই রিলিজ হয়েছে। সেই টাকার ১৩৪ কোটি অন্য খাতে খরচ করছে মমতার সরকার। এটা বেআইনি। অপরাধ।”

আরও পড়ুনঃ বিশ্বকাপজয়ী রিচা ঘোষের নামে শিলিগুড়িতে তৈরি হবে ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
এই আর্থিক অনিয়মের তদন্তে কেন্দ্রীয় নিরীক্ষা সংস্থা ক্যাগের রিপোর্ট (CAG Report) প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “এ বিষয়ে রাজ্যপাল, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জানাব। প্রয়োজনে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হবে।”












