বাংলাহান্ট ডেস্ক : ‘আমি বন্ড, জেমস বন্ড’, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনীতিকরা দু’দিন পরে এই রকম একটা দাবি করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ তৃণমূল বলে বিজেপিতে আমাদের লোক রয়েছে, আবার বিজেপি কখনও বলে বসে তৃণমূলে বিজেপির চরে ভর্তি। শুভেন্দু অধিকারী আবার সবার থেকে একটু এগিয়েই থাকেন। সেটা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ব্যপারেই হোক বা বিস্ফোরক দাবি করার ক্ষেত্রেই হোক, নন্দীগ্রামের বিধায়ক সবসময় এগিয়ে। এদিন তিনি বলে বসলেন তৃণমূলের ৮০ শতাংশ কর্মীই নাকি বিজেপির লোক।
বিধানসভা থেকে সাত বিজেপি বিধায়ককে নির্বাসন করা নিয়ে হুলস্থুল হয়েছে অনেক আগেই। সেই ঘটনার জের গড়িয়েছে হাইকোর্ট পর্যন্ত। কিন্তু আদালত রায় দিয়েছে, এই সমস্যা মিটিয়ে নিতে হবে বিধানসভার মধ্যেই। সোমবার বিধানসভা অধিবেশনের শুরুর দিনেই মোশন আনে বিজেপি। কিন্তু সেই মোশন গৃহীতই হয়নি। এরপরই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন মোশন যে গৃহীত হবে না, সেটা নাকি তিনি আগে থেকেই জানতেন। এই বিষয়ে শুভেন্দু দাবি করেছেন, তৃণমূলে ৮০ শতাংশ লোকই বিজেপির। তাই এ কথা তিনি আগে থেকে জেনে গিয়েছেন।
সম্প্রতি চর-বিতর্ক নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে বঙ্গের রাজ্যরাজনীতিতে। এই একটার পর একটা দাবি করে গেছেন তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলেরই একাধিক নেতা। দুই দলেরই দাবি, বিপক্ষে রয়েছে তাঁরে ‘চর’, তাই বিরোধী দলের ভিতরের সব খবরই নাকি তাঁরা পেয়ে যাচ্ছেন আগে থেকেই। এরই মধ্যে শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্যে নতুন করে বিতর্ক বাড়াতে পারেই বলে মনে করছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল।
শুভেন্দুরবাবু দাবি করেন, তাঁদের আনা প্রস্তাব যে গ্রহণ করা হবে না, এ কথা সকালেই জেনে যান তিনি। সকাল ৯ টা নাগাদ তিনি এ কথা জানিয়ে বিধায়ক মনোজ টিগ্গাকে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজও করেন তিনি। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘আপনারা চাইলে আমার সেই হোয়াটসঅ্যাপ দেখেও নিতে পারেন।’ পাশাপাশি, শুভেন্দুর বক্তব্য, প্রস্তাব যে গৃহীত হয়নি, তা শুধুমাত্র স্পিকারের সিদ্ধান্ত নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই নাকি এমনটা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সরকারেরও সব খবর আমার কাছে আছে। মুখ্যমন্ত্রী আগে থেকেই বারণ করে দিয়েছেন, আমাদের আবেদন না নেওয়ার জন্য। আমি অনেক আগেই বলে দিয়েছিলাম যে এমনটাই হতে চলেছে আজ।’
বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার সম্প্রতি দাবি করেছেন, তৃণমূলে বেশ কয়েকজন চর রয়েছে বিজেপির। সেই দাবি একরকম উড়িয়েই দেয় তৃণমূল। জেপি নাড্ডার বাংলা সফরের আগে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘জেপি নড্ডা যে রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন, তিনি কি জানেন যে বৈঠক চলাকালীনই হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর বক্তব্য আমাদের কাছে পৌঁছে যাবে কি না?’ কুণাল ঘোষের স্পষ্ট করে বলেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষস্তরেও রয়েছে তৃণমূলের চর। এই বিতর্কে আবার রাহুন সিনহা দাবি করেন, কুণাল ঘোষই তাঁদের চর। তাঁর কাছ থেকেই সব খবর পায় বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্তবাবুও যোগ দেন এই বিতর্কে। তিনি বলেন, ‘সব দলেই অন্যদলের লোক ঢোকানো থাকে। তৃণমূলেও আমাদের লোক রয়েছে। যারা আমাদের খবর দেয়।’
জানা যাচ্ছে, বিজেপি বিধায়কদের নির্বাসন তোলার জন্য আবেদন জানিয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয় এ দিন। কিন্তু বাতিল হয় সেই প্রস্তাব। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সঠিকভাবে এই মোশন জমা করা হয়নি, তাই এই মোশন গ্রহণ করা যাচ্ছে না। আগামিকাল, মঙ্গলবার বিএ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করা হবে বলেও জানিয়েছেন অধ্যক্ষ। বিধানসভার একটি বিশেষ সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, উকিলের চিঠি প্রস্তাবের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ভাবে সাদা কাগজে বা বিরোধী দলনেতার প্যাডে এগুলো দেওয়াই নিয়ম। কিন্তু বিজেপি তা না করে মোশনের সঙ্গেই উকিলের চিঠি জমা দিয়েছিল। যার ফলেই বাতিল হয় এই প্রস্তাব।