বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সম্প্রতি, বিজেপি নেত্রী নুপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ক্রমশ আন্তর্জাতিক মহলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ভারত সরকার (India)। পয়গম্বর সংক্রান্ত মন্তব্যের ফলে জেরবার হয়ে রয়েছে কেন্দ্র। ইসলামিক দেশগুলি বিশেষত সৌদি আরব, ইরাক, ইরান ও কুয়েতের মত দেশগুলি ক্রমশ ভারতের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পথে নেমেছে। প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ থেকে শুরু করে ভারতীয় দ্রব্য সামগ্রী বয়কটের ডাক পর্যন্ত দিয়েছে তারা। তবে এর মাঝেই এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বাংলাদেশ (Bangladesh) সরকার। তবে তাদের এই আচরণের নেপথ্যে কারণ কি? এক্ষেত্রে অবশ্য বেশ কয়েকটি দিক সামনে উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য, একাধিক দেশ ভারতকে যখন আক্রমণ করে চলেছে, সেই মুহূর্তে চুপ করে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই পদক্ষেপের পেছনে অবশ্য বেশ কয়েকটি কূটনীতিক দিক রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা না হলেও সেই দেশের মুসলিম সমাজ থেকে শুরু করে অন্যান্য একাধিক মহল এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ‘সুশাসনের’ কথা তুলে ধরেছেন। ওপার বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ের কথায়, “ভারতের তুলনায় ধর্মীয় সহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ যথেষ্ট প্রশংসনীয় এবং বর্তমানে সেই কারণে আমরা যথেষ্ট নিরাপদে রয়েছি।”
সম্প্রতি বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী বলেন, “পয়গম্বর বিতর্কে এক সপ্তাহের উপর কেটে গেলেও প্রধানমন্ত্রী এখনো চুপ করে রয়েছেন। কোন প্রতিক্রিয়া আপাতত জানানো হয়নি। তবে বর্তমানে বাণিজ্যগত দিক থেকে ক্ষতির আশঙ্কা হওয়ায় কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে, যা কাম্য নয়। এছাড়া আমাদের দেশের দিকে যদি দেখা যায়, তবে বাংলাদেশ সরকার ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রাখার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে, সেই কারণে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো রয়েছে।”
স্বভাবতই এদিন তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে দুর্গাপুজোয় অশান্তি এবং এনআরসি প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অশান্তির ঘটনা ঘটলেও পরবর্তীকালে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকজন মানুষকে গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়। তবে ভারতে এনআরসি বিতর্ক মাঝে তাদের নেওয়া ব্যবস্থা কখনোই উপযুক্ত ছিল না।”
এছাড়াও বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের এক নেতা বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে ভারত যেভাবে আমাদের সহায়তা করেছিল, তার জন্য আমরা ভারতকে সম্মান করি। তবে বর্তমানে যেভাবে গোমাংস বিতর্ক থেকে শুরু করে পয়গম্বরকে নিয়ে অপমান করে চলেছে তারা, সেটা নিন্দনীয়। এতে মানুষের শান্তি বিঘ্নিত হয়। আমাদের দেশে সংখ্যালঘুরা আহত হলে আমরা তার প্রতিবাদ করি, ফলে ভারতে যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে, সেই বিষয়ে সকলের সমালোচনা করা উচিত।”
এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে যে, একাধিক মহল থেকে সমালোচনা করা হলেও শেখ হাসিনা সরকার কেন এখনও কোনরকম বিবৃতি জানালো না! এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ মহল প্রধান দুটি কারণকে তুলে ধরেছে। প্রথমত, বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক বেশ ভালো জায়গায় রয়েছে। স্থল, বাণিজ্য সহ একাধিক ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে আর এর মাঝেই খুব দ্রুত ভারতে আসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে কোনো মতেই সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না হাসিনা সরকার। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশের অশান্তির প্রসঙ্গ। মনে করা হচ্ছে, যদি বাংলাদেশ সরকার ভারতের নিন্দা করে, তবে সে দেশের মৌলবাদী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আন্দোলনের পথে নামতে পারে আর তার ফলে উল্টে সেই দেশের পরিস্থিতি আরো তলানীতে গিয়ে ঠেকলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেই কারণেই এই মুহূর্তে হাসিনা সরকার ভারতের বিরুদ্ধে কোনরকম পদক্ষেপ নেয়নি বলে মত সকলের।