বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ফের তৃণমূলের নেতার (TMC Leader) দাদাগিরি! আর যার জেরে ভুক্তভুগি সহকারী প্রধান শিক্ষক। অভিযোগ শাসকদলের নেতাদের বাধায় ৬ বছর নিজের স্কুলেই ঢুকতে পারেননি ওই শিক্ষক (School Teacher)। কোনো রাস্তা না পেয়ে হাইকোর্টে (Calcutta High Court) ছোটেন ওই শিক্ষক। আর সেখানেই মিললো সুরাহা। এদিন বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের বেঞ্চে এই মামালা উঠলে বিচারপতির নির্দেশ, অবিলম্বে স্কুলে যোগদান করাতে হবে। পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকে শিক্ষকের সমস্ত বকেয়া সুদ সমেত মেটাতে হবে।
মূল ঘটনা: ২০১২ সালে বীরভূমের তেঁতুলবেড়িয়া জুনিয়র হাই স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সৌমেন্দ্রনাথ মিয়া। ২০১৬ সালে ওই স্কুলেরই টিচার ইনচার্জ পদ পান। শিক্ষকের অভিযোগ, ওই বছর থেকেই অবৈধ নির্মাণ নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত পরিচালন কমিটির সঙ্গে তার বচসা শুরু হয়।
অভিযোগ, স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজারাম ঘোষ সহ কমিটির কয়েকজন সদস্য মিলে স্কুলের খেলার মাঠে অবৈধ নির্মাণ শুরু করেন। এই নিয়ে মামলাকারী বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার পাশাপাশি পুলিশ দিয়েও হুমকি দেওয়া হয়। থানাতে প্রভাব খাটিয়ে স্কুলে ঢুকলে সৌমেন্দ্রনাথ মিয়াকে গ্রেফতার করা হবে বলেও শাসানি দেয় পুলিশ।
এই নিয়ে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দপ্তর সহ স্থানীয় পুলিশকেও অভিযোগ জানালে কোনো সুরাহা হয়নি। বন্ধ করে দেওয়া হয়ে বেতনও। ওই শিক্ষকের অভিযোগ, পরবর্তী সময়ে তাকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হতে থাকে। চাপে পড়ে তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। তবে এই নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ তরফে কোনো সিদ্ধান্তের কথা না জানানোয় তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন। আবার আগের মতো স্কুলে যোগদান করার জন্য শিক্ষাদপ্তরের কাছে আবেদন জানান।
আরও পড়ুন: DA-র পর এবার এক ধাক্কায় বাড়বে বেতন, বিরাট ঘোষণা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের, জারি বিজ্ঞপ্তি
এদিন আদালতের ওই শিক্ষকের আইনজীবীর সওয়াল, স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু না জানিয়ে বেতন বন্ধ করে দিতে পারে না। তাকে শোকজ, সাসপেন্ড কিছুই করা হয়নি। বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ম বিরুদ্ধ। স্কুল কর্তৃপক্ষ যেসব অভিযোগ এনেছিল তারও কোনও প্রমাণ তারা দিতে পারেননি।
আইনজীবী আরও বলেন, কোনও শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে যদি তৎক্ষণাৎ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হয়ে এবং এভাবে তিন বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। রাজ্য সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন বন্ধ করে ৭ বছর কিভাবে বসে থাকতে পারে? রাজ্য সরকার এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের আইনজীবীরা নিজেদের কাজের স্বপক্ষে কোনো যুক্তি দিতে পারেননি।
এদিন মামলার শুনানিতে সবটা শুনে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়। বলেন, “একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করে এভাবে বেতন বন্ধ করে বসে থাকা যায়? আইন তো অন্য কথা বলছে।” এরপরই অবিলম্বে ওই শিক্ষককে স্কুলে যোগদান করানোর পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকে শিক্ষকের সমস্ত বকেয়া সুদ সমেত মেটানোর নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।