বাংলা হান্ট ডেস্ক : একই অঙ্গে কত রূপ, কখনও তিনি ‘মিসাইল ম্যান’ আবার কখনও ‘পিপ্লস প্রেসিডেন্ট’। তবে মাটির সাথে তাঁর সম্পর্ক চিরকালের। তাঁর ওয়ার্ক এথিক্সে কোন নড়চড় হওয়ার উপায় নেই। তার পদ যাইহোক না কেন, নিজের এথিক্সে কোন আঁচড় দেখতে রাজি নন তিনি। তিনি হলেন দেশের সেরা পরমাণু বিজ্ঞানী, শিক্ষক তথা রাষ্ট্রপতি ‘ডক্টর এ পি জে আব্দুল কালাম’ (A. P. J. Abdul Kalam)। সম্প্রতি তাঁকে নিয়েই এক কিসসা শোনালেন আইএএস (Indian Administrative Service) অফিসার এম ভি রাও।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবনে তাঁর অতুলনীয় অবদানের জন্য তাঁকে ‘মিসাইল-ম্যান’ বলাই হয়। সাল ১৯৯৮-এ পোখরানের পরমাণু বিষ্ফোরণের পেছনে সবথেকে বড় অবদান ছিল এ পি জে আবদুল কালামের। পাশাপাশি শিক্ষক হিসেবেও তিনি ছিলেন তুখোড়। বহু খ্যাতনামা বিজ্ঞানীর হাতেখড়ি হয়েছে তাঁর কাছে। তার জ্ঞান চর্চার ইচ্ছা এতটাই প্রবল ছিল যে পাঁচ বছর রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তিনি আবারও পড়াশোনার দুনিয়াতেই ফিরে যান।
তো এহেন মানুষটিকে নিয়েই এক অদ্ভুত গল্প শোনালেন ১৯৮৮ ব্যাচের আইএএস অফিসার এম ভি রাও তাঁর। তিনি লিখেছেন, ‘কালাম সাহেবকে একটি সংস্থা একটা মিক্সার গ্রাইন্ডার উপহার দিয়েছিল। তিনি পর দিনই চেক পাঠিয়ে তার দাম দিয়ে দিয়েছিলেন!’ মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে এটা আবার কী ধরণের গল্প? বিষয়টা একটু খোলসা করেই বলা যাক।
আরও পড়ুন : কেঁচো খুঁড়তে কেউটে! যাদবপুর কাণ্ডে প্রাক্তন ও বর্তমান মিলিয়ে গ্রেফতার আরও ৬ পড়ুয়া
রাও তার পোস্টে লিখেছেন, ‘সেটা ২০১৪ সাল। ডক্টর কালাম এক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। তার স্পন্সর ছিল ‘সৌভাগ্য এন্টারপ্রাইস লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা। সূচনা-পর্বে তাঁকে উপহার হিসেবে একটি মিক্সি তুলে দিতে যায় ওই সংস্থা। কিন্তু তিনি তা নিতে চাননি। তাঁকে সংস্থার পক্ষে বলা হয়, এতে শুধু একটা মিক্সার গ্রাইন্ডারই আছে, তিনি তা যেন গ্রহণ করেন। আর কথা বাড়াননি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তিনি তা নিয়ে নেন।’ তবে এখানেই গল্পের শেষ নয়, বরং শুরু।
আরও পড়ুন : স্বাধীনতা দিবসে ওলার বড় চমক! ৮০ হাজার টাকায় লঞ্চ হল ই-স্কুটার
ওই অফিসারের কথা অনুযায়ী, বাড়ি ফেরার পর কালাম তাঁর কোনও কর্মচারীকে মিক্সির দাম জানার জন্য দোকানে পাঠান। তিনি দাম জেনে এসে কালামকে বললে নিজের ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের চেকবুক বের করে ওই সংস্থার নামে তিনি ৪৮৫০ টাকার চেক লিখে পাঠিয়ে দেন। কারণ ঐ কর্মচারীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঐ মিক্সার গ্রাইন্ডারের বাজারদর ছিল ৪৮৫০ টাকা।
আরও পড়ুন : দাম মাত্র 8999 টাকা! মটোরোলার এই নতুন 8GB ব়্যামের স্মার্টফোনে ক্যামেরা কন্ট্রোল করবে AI
সংস্থাটি কালামের এই পদক্ষেপে অবাক হয়ে যায়। তবে তারা চেক ড্রপ করতে চাননি। ‘সব চেয়ে মূল্যবান’ সংগ্রহ হিসেবে রেখে দিতে চেয়েছিলেন ‘কালামের সই করা চেক’। এদিকে ‘কালাম’ও নাছোড়বান্দা। তিনি ব্যাঙ্ক থেকে ফলো আপ নেওয়া শুরু করলেন। যখনই জানতে পারলেন চেক ড্রপ হয়নি তখন সটান ফোন করেন ওই সংস্থাকে। বলেন, ‘আপনারা চেকটি ব্যাঙ্কে ড্রপ করুন। না করলে কিন্তু আমি মিক্সার গ্রাইন্ডারটা ফেরত দিয়ে দেব।’
এরপর আর কোনও রিস্ক নেয়নি সংস্থাটি। তারা ঐ চেকের একটি ফটোকপি রেখে চেক ড্রপ করেন। সেটা তারা বাঁধিয়ে অফিসে সাজিয়ে রেখেছে। সেই চেকের ছবিও ওই অফিসার পোস্ট করেছেন। কালামকে যাঁরা কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা সকলেই জানেন তাঁর অতি সাধারণ জীবনযাপনের কথা। পাঁচ বছর রাষ্ট্রপতির পদ সামলানোর পর সেখান থেকে একটা কিছুও তিনি নিয়ে যাননি বলে শোনা যায়। সঙ্গে করে আনা বই বাদ দিয়ে সবকিছুই সেখানেই ফেলে গিয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, কোনটাই তার ব্যক্তিগত জীবন নয়।