রাশিয়া থেকে তেল কিনছে ভারত, আটকাতে নতুন পন্থা অবলম্বন আমেরিকার

বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের (Russia-Ukraine War) আবহে রাশিয়ার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মুম্বাইয়ের মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেল, মুম্বাই বন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়েছেন। এই চিঠিতে বলা হয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে রুশ পণ্যবাহী জাহাজকে মুম্বাই উপকূলে আসতে দেওয়া উচিত নয়। জানা গিয়েছে, ওই চিঠিটি প্রায় ১৫ দিন আগে লেখা হয়েছে। যার ফলে এটিকে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল কেনা থেকে ভারতকে বিরত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রচেষ্টা হিসাবে দেখা হচ্ছে।

মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেল মুম্বাই বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছেন:
এই প্রসঙ্গে দ্য প্রিন্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমেরিকা ও তার মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে, এর মধ্যেও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয়, অপরিশোধিত তেল ও অন্যান্য পণ্য বোঝাই রাশিয়ার জাহাজকে ভারত মুম্বাই বন্দরে প্রবেশের অনুমতিও দিয়েছে।

এদিকে, মার্কিন কনস্যুলেট থেকে চিঠি পাওয়ার পর বন্দর, শিপিং এবং ওয়াটারওয়েজ মন্ত্রকের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা মুম্বাই পোর্ট অথরিটি, শিপিং ডিরেক্টরেট জেনারেলকে (ডিজিএস) একটি চিঠি লিখেছিল। যেখানে তাঁর কাছ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।

এমতাবস্থায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুম্বই বন্দর কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা কোনো জাহাজ বা কার্গো জাহাজের অনুমতি অস্বীকার করি না, যতক্ষণ না আমরা শিপিং মহাপরিচালক বা কোস্ট গার্ডের মতো সংস্থাগুলির কাছ থেকে নির্দেশ পাই।” পাশাপাশি, ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হওয়ায় ডিজিএসকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তবে, জানা গিয়েছে ইতিমধ্যেই, ডিজিএস এই সিদ্ধান্তটি বিদেশ মন্ত্রকের কাছে হস্তান্তরিত করেছে। এই প্রসঙ্গে শিপিংয়ের মহানির্দেশক অমিতাভ কুমার বলেছেন, “আমরা মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেলের চিঠিটি বিদেশ মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছি এবং এই বিষয়ে নির্দেশ চেয়েছি।” এছাড়াও তিনি জানান যে, এখনও পর্যন্ত কোনো দেশের জাহাজকে ভারতীয় বন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। সাথে তিনি আরও জানান, জাহাজগুলি যদি সঠিকভাবে নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন না করে, তাহলে তাদের চলাচল অব্যাহত থাকবে।

ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনায় আমেরিকা খুশি নয়:
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চিনের পর রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা হয়ে উঠেছে ভারত। এমতাবস্থায়, বিপুল পরিমাণে রাশিয়ান তেল কেনার কারণে ভারতের এই পদক্ষেপে আমেরিকা মোটেও খুশি নয়। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একাধিকবার এই প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি, গত ৫ এপ্রিল, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জে সাকি বলেন, “আমরা মনে করি না যে রাশিয়ান তেল এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি ভারতের জন্য ঠিক হচ্ছে।”

CRUDE OIL 1

উল্লেখ্য যে, কয়েকদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অর্থনীতির উপদেষ্টা দালিপ সিংও রাশিয়ার তেল আমদানির বিষয়ে ভারতকে সতর্ক করেছিলেন। যদিও, পশ্চিমী দেশগুলির সমালোচনার পরও এখনও পর্যন্ত ভারত এমন কোনো ইঙ্গিত দেয়নি যেখানে স্পস্ট হয়েছে যে তারা রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে। পাশাপাশি, ভারত ইউক্রেনে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। শুধু তাই নয়, ইউক্রেনে হামলার জন্য জাতিসংঘের ফোরামে রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে ভারত নিজেকে দূরে সরিয়েও রেখেছিল।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর