বাংলাহান্ট ডেস্কঃ হোমিওপ্যাথি (Homeopathy) চিকিত্সায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করা যায়। করোনা আক্রান্তের উপসর্গ সারানোর জন্য ইউনানি ওষুধ অত্যন্ত কার্যকর বলে জানানো হয়েছে। এর জন্য একটি নির্দেশিকাও জারি করা হয়। কী করা উচিত, কী করা উচিত নয় তার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। এমনকি কি ওষুধ খেতে হবে, তা-ও বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আয়ুর্বেদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, আরসেনিকাম অ্যালবাম ৩০ এই ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম। মার্চ মাসে ম্যাসিমো ইতালির একটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে গিয়ে ৮৪ জনের উপর হোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রয়োগ করেন। সেই চিকিৎসায় ৬৪ জন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান কোনওরকম জটিলতা ছাড়াই। বাকিদের অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। কিন্তু একজন বাদ দিয়ে বাকিরাও শেষপর্যন্ত সুস্থ হয়ে যান।
গোটা বিশ্ব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। বিশ্বজুড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা । ব্যতিক্রম নয় ভারতও । এখনও পর্যন্ত এই করোনা মোকাবিলার কোন প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব হয়নি । কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে করোনা ভাইরাস তার জেনেটিক কাঠামো পরিবর্তন করে। তাই করোনার কোন প্রতিষেধক এখনও তৈরি করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। ভারতের ওষুধ পাওয়া আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এরমধ্যেও আশার আলো দেখাচ্ছে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা।
কেন্দ্রীয় সরকারও করোনা চিকিৎসার জন্য আয়ূশ প্রোটোকলেযুক্ত করেছে হোমিওপ্যাথিকে। এরপরই ভারতের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা ইতালির হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক এবং গবেষক ম্যাসিমোর চিকিৎসা পদ্ধতিকে সামনে রেখে করোনা চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছেন। ম্যাসিমো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অজানা রোগের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন। করোনা ভাইরাস নিয়ে ইতালিতে তাঁর চিকিৎসা সাড়া ফেলেছে । মার্চ মাসে ম্যাসিমো ইতালির একটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে গিয়ে ৮৪ জনের উপর হোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রয়োগ করেন। সেই চিকিৎসায় ৬৪ জন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান কোনওরকম জটিলতা ছাড়াই। বাকিদের অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। কিন্তু একজন বাদ দিয়ে বাকিরাও শেষপর্যন্ত সুস্থ হয়ে যান।
অর্থাৎ ম্যাসিমো সেই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এইরকম অজানা রোগে বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় সিমটমগুলো ভালো করে খুঁজে বের করতে হয় । তারপর সেই উপসর্গ অনুযায়ী প্রতিষেধক প্রয়োগ করতে হয় রোগীদের উপর । সেই থিওরিকে সামনে রেখে মুম্বই, গুজরাত, চেন্নাই, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা বিভিন্ন সরকারি কোভিড ১৯ সেন্টারে গিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করেছেন। সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে বেশকিছু হোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রয়োগ করেছেন তাঁরা। তাতে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে বলে সেইসব চিকিৎসকদের দাবি।
এরপরই সেইসব রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করোনা মোকাবিলায় নেমে পড়েছেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা । ইতালির সেই বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক এবং গবেষক ম্যাসিমোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে আমাদের রাজ্যের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক এবং হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের লেকচারার ডাঃ সৌগত ভট্টাচার্যের। তিনি চাইছেন মুম্বই, গুজরাত, চেন্নাই, রাজস্থানে যেভাবে সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা করোনা মোকাবিলা করেছেন, সেভাবে বাংলাতেও কাজ করার সুযোগ পান হোমিওপ্যাথি চিকিত্সকরা । ইতিমধ্যে সেই ইচ্ছাপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠিও লিখেছেন তিনি । ম্যাসিমোর সাথে বিভিন্ন অজানা রোগের বিরুদ্ধে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে কোভিড ১৯ নিয়ে বেশ কিছু তথ্য জানান ডাঃ ভট্টাচার্য ।
তাঁর দাবি, “করোনার যা উপসর্গ তার ভিত্তিতে চিকিৎসা করলে এই মারণ রোগকে অনেকটাই প্রতিহত করা সম্ভব। আর সেটা করতে হবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে । কারণ করোনার প্রাথমিক উপসর্গ হালকা জ্বর , কাশি ,নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট বা ব্লাডক্লড করে যাওয়ার মত ক্ষেত্রে প্রচুর ওষুধ আছে হোমিওপ্যাথিতে । এক কথায় বলা যায় আগে থেকে সাবধানতা অবলম্বন করার ওষুধ যেমন আছে , তেমনি উপসর্গ দেখা দিলে বা করোনা যদি পজেটিভ হয়, সেসব ক্ষেত্রেই হোমিওপ্যাথিতে ওষুধ আছে ।
করোনার উপসর্গের সঙ্গে খুব মিল আছে সোয়াইনফ্লু-এর । এই সোয়াইনফ্লু নিয়ে চিকিৎসা করে বড়সড় সাফল্য পেয়েছে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাশাস্ত্র । তাই হোমিওপ্যাথি ওষুধ নিয়ে করোনার সব স্টেজে লড়াই করার যথেষ্ট ওষুধ আছে । তবে সবার আগে করতে হবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল । কারণ আমাদের দেশে বহু মানুষ আক্রান্ত ।
তাঁদের শরীরে কোন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না । তাই করোনাকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে হলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ভীষণ জরুরি এবং অত্যাবশ্যক । ” তাঁর দাবি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ইতিহাস অনুযায়ী, ১৮৩০ সালে কলেরা প্যান্ডেমিক আর প্লেগ প্যান্ডমিক এবং ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যান্ডেমিকের সময়ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রয়োগ করার পর মৃত্যুর হার ৫ থেকে ৯ শতাংশ কমে গিয়েছিল ।