কয়লা পাচারে মাথা ঘুরে যাওয়া প্রমাণ! হিসাবের ডায়েরি উদ্ধার করল ED, এবার তোলপাড় হবে রাজ্য

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বর্তমানে রাজ্যে একাধিক দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড়। গরু পাচার থেকে কয়লা পাচার, নিয়োগ দুর্নীতি। একজোটে সব দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। এবার কয়লা পাচার (Coal Smuggling Scam) নিয়ে নানা তথ্য ইডির হাতে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে কয়লা পাচারের বিষয় মসৃন করতে একাধিক ছোট বড় পুলিশ (Ground-level police officers) আধিকারিকরা জড়িত ছিল, এই অভিযোগ বহু পুরোনো। দুর্নীতিতে সাহায্যের বিনিময়ে পুলিশ কর্তারা পেতেন ‘ভেট’ বা ‘প্রোটেকশন মানি’, এমনটাই দাবি ইডির (ED)।

আর সেই টাকার পরিমাণ শুনলে চোখ কপালে উঠবে এমনটাই স্বাভাবিক। কয়লা পাচার মামলায় প্রমাণ হিসেবে আদালতে ইডি-র তরফে জমা দেওয়া একটি ডায়েরির পাতায় লেখা রয়েছে, এসডিপিও: ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। সার্কল ইনস্পেক্টর (CI): ৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। স্থানীয় থানার ওসি: ৬ লক্ষ টাকা। আর এই হিসেবই হল ইডির মূল অস্ত্র।

ইডির দাবি, ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর, এই তারিখে কয়লা দুর্নীতিতে মোট ১৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে শুধু এই তিন পুলিশকর্তাকে। তিনজনের একদিনের পাওনার অঙ্ক ১৬ লাখের অধিক। তদন্তের ভিত্তিতে ইডির দাবি, এই ধরণের পুলিশকর্মীদের একাংশের সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে অভিযুক্তদের কম করে ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যেই অঙ্ক দেখে ভিরমি খাচ্ছে খোদ ইডিও।

আরও পড়ুন: আজ তুমুল ঝড়-বৃষ্টি চলবে ৮ জেলায়! রেকর্ড বর্ষণের কমলা সতর্কতা জারি করল হাওয়া অফিস

ed f1

গোয়েন্দাদের দাবি, ২০১৫ থেকে ২০২০ এই ৫ বছরে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম ও দুর্গাপুর-আসানসোল এলাকায় ৫০টিরও বেশি থানায় একাধিক পুলিশকর্তাকে মাসিক ‘ভেট’ দেওয়া হত কয়লা পাচারের পথ মসৃন করতে। তবে এরা যে বড় পদমর্যাদার পুলিশ তেমনটা নয়। পদের নিরিখে এরা ছোট থেকে মাঝারি শ্রেণীর।

টাকার দিক থেকে বিবেচনা করলে উল্লেখিত জেলা গুলির প্রতিটি থানায় গড়ে মাসে ৭-৮ লক্ষ টাকা দেওয়া হত। ৫ বছরে যার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০০ কোটি। এমনটাই ধারণা ইডির। ইডি সূত্রে দাবি, কয়লা পাচারের মূল অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লাল, তার ঘনিষ্ঠ একাধিক কয়লা মাফিয়া ও অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ভেটের বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।

এই ‘ভেট’ যাতে নিয়ম করে প্ৰতি মাসে ওই পুলিশকর্তাদের হাতে পৌঁছে যা তা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জেলাগুলির সংশ্লিষ্ট মহকুমার জন্য এক জন হিসাবরক্ষক ও এক জন গাড়িচালককে। পাচারকারীদের নির্দেশ মতো সেই টাকার হিসেব ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করতে রাখতেন ওই হিসাবরক্ষক ও গাড়িচালকেরা। ইডি সূত্রে খবর, তদন্তে নেমে এমন কিছু ডায়েরিও উদ্ধার করা হয়েছে।

তদন্তে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে একাধিক পুলিশ অফিসার ও বিভিন্ন থানার ওসি-আইসিকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। তাদের আয়-ব্যয়, সম্পত্তির হিসাব, ব্যাঙ্ক ডিটেলস সমস্ত কিছু ইডির নজরে।

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর