বাংলাহান্ট ডেস্ক: প্রকাশ্য স্থানে বোরখা (Burqa) বা হিজাব পরা বন্ধে আইন আনতে চলেছে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সরকার। ইসলামি ও সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতাবাদ রুখতেই এই পদক্ষেপ বলে দাবি করেছে ইতালির শাসক দল ‘ব্রাদার্স অফ ইতালি’। ইতালির সংসদে ৮ অক্টোবর এই সংক্রান্ত বিল পেশ করা হয়েছে। বিলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, দোকান, অফিস কিংবা অন্য কোনও প্রকাশ্য স্থানে শরীর সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরা যাবে না। বিশেষ করে বোরখা বা হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইন অমান্য করলে ৩০০ থেকে ৩০০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৬ হাজার থেকে ২.৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
বোরখা (Burqa) নিষেধাজ্ঞা মেলোনি সরকারের
বিলটি সংসদে পেশ করেছেন মেলোনির দলের তিন জন সাংসদ। তাদের দাবি, এই আইন শুধু ধর্মীয় উগ্রতা রোধই নয়, বরং সমাজে সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যেও আনা হয়েছে। ইতালিতে ধর্মের নামে বিভাজন এবং ঘৃণা ছড়ানো রুখতেই এই পদক্ষেপ। সরকার মনে করছে, বোরখা (Burqa) ও হিজাবের মতো পোশাক সমাজে বিচ্ছিন্নতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই বিল কার্যকর হলে ইতালিতে ‘সাংস্কৃতিক ঐক্য’ বাড়বে এবং চরমপন্থা বা ইসলামি উগ্রতার মূলে আঘাত করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন:“শান্তির দাবিদার” ট্রাম্প পেলেন না নোবেল, ক্ষুব্ধ হোয়াইট হাউস যা জানাল…
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সাল থেকেই ইতালিতে একটি আইন বিদ্যমান, যেখানে বলা হয়েছিল প্রকাশ্য স্থানে মুখ ঢাকা পোশাক পরা নিষিদ্ধ। তবে সেই আইনে বোরখা (Burqa) বা হিজাবের কথা সরাসরি উল্লেখ ছিল না। এবার সেই ফাঁক পূরণ করতেই নতুন এই বিল আনছে মেলোনি সরকার। মেলোনির শরিক দল ‘লিগ পার্টি’ চলতি বছরের শুরুতে দাবি তুলেছিল, মুখ ঢাকা পোশাক বলতে বোরখা ও হিজাবকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাদের সেই দাবিকেই এবার আইন আকারে রূপ দিচ্ছে সরকার। ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক সদস্য বলেছেন, “এই বিলটি ফ্রান্সের আইনের অনুপ্রেরণায় তৈরি। ২০১১ সালে ফ্রান্স বোরখা নিষিদ্ধ করেছিল। ইতালিও সেই পথেই হাঁটছে।” বিশ্লেষকদের মতে, জর্জিয়া মেলোনির জোট সরকার বর্তমানে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই এই বিল পাস হওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
তবে এই পদক্ষেপকে ঘিরে ইতালিতে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। একদিকে ডানপন্থী সমর্থকরা আইনটিকে “দেশের সংস্কৃতি রক্ষার পদক্ষেপ” বলে সমর্থন জানাচ্ছেন, অন্যদিকে মুসলিম সংগঠনগুলি একে “ইসলাম বিরোধী” ও “নারীর স্বাধীনতার উপর আঘাত” বলে অভিযোগ তুলেছে। ইতালির মুসলিম কাউন্সিলের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বোরখা (Burqa) বা হিজাব কোনও উগ্রতার প্রতীক নয়, বরং এটি বিশ্বাস ও স্বাধীনতার প্রকাশ। এই আইন ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন করছে।”

আরও পড়ুন:চাপ বাড়ল পাকিস্তানের? জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর! কী নিয়ে হল আলোচনা?
ডানপন্থীরা অবশ্য এই সমালোচনাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, ইতালিতে প্রায় পাঁচ লক্ষ মুসলিম বাস করেন, যাদের মধ্যে একাংশ ধর্মীয় চরমপন্থাকে উস্কানি দিচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে এই বিল দেশের ঐতিহ্য ও সামাজিক সংহতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করছে মেলোনি সরকার। বিশ্ব রাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ইউরোপে ডানপন্থী জাতীয়তাবাদের উত্থানকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে। অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্থা ও মুসলিম সংগঠনগুলি বলছে, এই বোরখার (Burqa) ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলে অথবা আইন পাশ হলে তা ইউরোপে ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দেবে।